২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সড়ক দুর্ঘটনার নামে হত্যাকাণ্ড

গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধ করুন

-

সড়ক দুর্ঘটনার নামে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। দুই বাসের প্রতিযোগিতা ও অদক্ষ চালক দিয়ে বাস চালানোর কারণে এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এগুলো দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ড বলা চলে। মহাসড়ক নয়, খোদ রাজধানীতে দুই বাসের প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাসে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের ওপর বাস তুলে দেয়ায় দুইজন ছাত্রের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ফ্লাইওভার থেকে নেমে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ওপর তুলে দেয়। স্কুলগামী ছাত্ররা তখন বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিল। লাশ হয়ে ফিরে গেল দুই কিশোর-কিশোরী। ড্রাইভারের খামখেয়ালিপনার কারণে দু’টি পরিবারে বিপর্যয় নেমে এলো।
সড়ক দুর্ঘটনার নামে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে নানা মহল থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সারা দেশে এভাবে প্রতিদিন প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬৪ জন, বছরে ক্ষতি হয় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সাত হাজার ৩৯৭ জন। গাড়ি দুর্ঘটনায় যাত্রী মারা যায় ৪৯ শতাংশ, আর পথযাত্রী মারা যায় ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ রাস্তার পাশে থাকা মানুষদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে। রাজধানীতে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ দুই বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা। এর আগে দুই বাসের চাপায় হাত হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালত থেকে ক্ষতিপূরণসহ নানা ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
দীর্ঘ দিন ধরে বাস চালানোর লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নীতির দাবি জানানো হলেও তা কার্যকর করা যায়নি। সরকারের একজন মন্ত্রী নিজে বলেছেন, শুধু গরু-ছাগল চিনতে পারলে তাকে লাইসেন্স দেয়া যায়। একই সাথে দুর্ঘটনার নামে হত্যাকাণ্ডের কঠোর শাস্তির বিধানের বিরোধিতা করে আসছেন পরিবহন শ্রমিকদের নামে প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী; যাদের সাথে ক্ষমতাসীন মহলের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ গণপরিবহন খাতে নৈরাজ্য। প্রতিটি বাস-মিনিবাসের ব্যবসা মূলত চালকেরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ইজারায় মালিকেরা তাদের বাস চালকের হাতে তুলে দেন। এ কারণেই চালকেরা যাত্রী ধরার জন্য সড়কে ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই অরাজকতা বন্ধ করা না গেলে নগরে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement