২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ঝুঁকির মুখে রোহিঙ্গারা

দায় নিতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে

-

মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূল অভিযানের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন এখন নানা ঝুঁকিতে রয়েছে। এক দিকে নিজ বাসভূমিতে ফেরার অনিশ্চয়তা, অপর দিকে খোলা আকাশের নিচে অমানবিক জীবনযাপন। এর মধ্যে এবার বর্ষা মওসুম শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া কয়েক লাখ মানুষ এখন পাহাড়ধসের শঙ্কায় রাত যাপন করছে। স্থানীয় প্রশাসন পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরিয়ে নিলেও এখনো ৩০টি পাহাড়ে তারা অবস্থান করছে। পলিথিনের ঝুপড়িতে কাদাপানির মধ্যে থাকতে হচ্ছে এই শরণার্থী পরিবারগুলোকে। কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের দু’টি উপজেলায় ১১ লাখ অতিরিক্ত মানুষের চাপে জনজীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে আছে এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ছে।
দুঃখের বিষয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ক্রমেই রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিছু দিন আগে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব এবং জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী-বিষয়ক হাইকমিশনের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাশিবিরগুলো পরিদর্শন করে অমানবিক পরিস্থিতির চিত্র দেখে গেছেন। তাদের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে সাহায্য এলেও এই সাহায্যের ওপর নির্ভর করে ১১ লাখ মানুষের থাকা-খাওয়া কিংবা জীবনের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন এমনিতেই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। এর পরও ওই অঞ্চলের মানুষ নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এত মানুষের বোঝা বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হওয়ার কথা নয়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর যে ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ দেয়া প্রয়োজন তা হয়নি। চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো প্রভাবশালী দেশগুলো মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। জাতিগত নির্মূল অভিযানের লক্ষ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা চালালেও এসব দেশ নিন্দা পর্যন্ত করেনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের সেনাকর্মকর্তাদের বিচারের উদ্যোগ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের অবসান ঘটাতে অবশ্যই তাদের নিজ আবাসভূমি তথা রাখাইন প্রদেশে ফেরত পাঠানোর বিকল্প নেই। রোহিঙ্গাদের অমানবিক জীবনযাপন এবং মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকার এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এড়াতে পারে না। বর্ষা মওসুমে রোহিঙ্গারা এখন যে ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন করছে, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরি। বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার দিকগুলো তুলে ধরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে অবিলম্বে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement