২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
উচ্চ বেকারত্বের মধ্যে ৩ লাখ বিদেশী কর্মরত

বছরে চলে যাচ্ছে ৫০০ কোটি ডলার

-

বাংলাদেশের চাকরির বাজার বড়ই মন্দা। উচ্চশিক্ষিতরা এ দেশে কোনো কাজ পাচ্ছেন না। অক্ষরজ্ঞানহীন কিংবা কম শিক্ষিতদের অনেকেরও একই অবস্থা। তাই বেকারত্ব বাংলাদেশের একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ম্যানিফেস্টোতে অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি থাকে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বেকারদের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের উচ্চ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচনের আগে। যদিও তারা এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন দল ব্যাপারটি যেন বেমালুম ভুলেই গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, দুর্মূল্যের এই চাকরির বাজারে বিদেশীরা চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছেন। লাখ লাখ বিদেশী আমাদের দেশে চাকরি করছেন। এ সরকারের আমলে প্রতিবেশী ভারতের লোকেরা প্রতি বছর ৪০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করছেন।
নয়া দিগন্ত বিস্তারিত এক প্রতিবেদনে লিখেছে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ বেকার। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা বলা হয়েছে মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বেকারের এ সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী। আইএলও-এর সংজ্ঞা অনুসারে মাসে এক ঘণ্টা কাজ করে, এমন লোকও বেকার নয়। তবে বিবিএসের জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। গত বছর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে তিন লাখ বিদেশী কর্মরত। ২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বক্তৃতায় বলেন, ‘বর্তমানে ৭০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন এবং তারা প্রতি বছর গড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান। এর বিপরীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই লাখ বিদেশী কাজ করেন। বেতনভাতা বাবদ তারা প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলার নিয়ে যান।’ ২০১৩ সালের ২১ মে সিলিকন ইন্ডিয়া নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটে ভারতের রেমিট্যান্স অর্জনবিষয়ক একটি খবরে উল্লেখ করা হয়, উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় কর্মরত রয়েছেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের দি ইকোনমিক্স টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের তথ্য অনুযায়ী, ভারত যেসব দেশ থেকে সব চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আয় করে তার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে চার বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে। গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কয়েক লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন। একটি তথ্য মতে, বাংলাদেশের গার্মেন্টে ২২ হাজার গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয় নাগরিক কর্মরত রয়েছেন।
২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী দ্রুত বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১২তম। ২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। সম্প্রতি সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিদেশী নাগরিকেরা বিশেষজ্ঞ, কান্ট্রি ম্যানেজার, কনসালট্যান্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, মার্চেন্ডাইজার, টেকনিশিয়ান, সুপারভাইজার, চিকিৎসক, নার্স, ম্যানেজার, প্রকৌশলী, প্রোডাকশন ম্যানেজার, ডিরেক্টর, কুক, ফ্যাশন ডিজাইনার ও শিক ক্যাটাগরিতে কাজ করেন। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ বেকারের দেশে সব চেয়ে দামি পদগুলোতে চাকরি করছে বিদেশীরা, এমনটি মানা যায় না। আমরা আশা করব, সরকার ও বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিতদের তাদের প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদগুলোতে নিয়োগ দিয়ে দেশপ্রেমের পরিচয় দেবেন। প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত করে নেবেন।


আরো সংবাদ



premium cement