১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আমদানি রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার

সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে

-

দেশের ব্যাংকব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমেছে। বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি ব্যাংকে যেসব লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রভাব সাধারণ আমানতকারীদের ওপর পড়েছে। এক দিকে ঋণের নামে অর্থ লোপাট হচ্ছে, অপর দিকে আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছরে দেশের আমদানিব্যয় প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। বিপুল মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য ভালো দিক। তবে আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, তাহলে দেশে শিল্পকারখানা স্থাপনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর এতে মানুষের কর্মসংস্থানও বাড়ে। কিন্তু বাস্তবে দেশে শিল্পকারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থানের চিত্র হতাশাজনক। বেকারসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এই সন্দেহ বাড়ছে যে, আমদানির নামে অর্থ পাচার বেড়ে যাচ্ছে কি না।
দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ করতে হলে ব্যাংকগুলোকে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, বিপুল মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য শুভ সংবাদ। তবে আমদানির আড়ালে যাতে অর্থ পাচার না হয়, সে বিষয়ে ব্যাংকারদের সতর্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও সন্দেহ করছেন, এভাবে টাকা পাচার হচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের কার্যক্রমে মানুষের মধ্যে কিছুটা সন্দেহ বা অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের সতর্কও করেছেন তিনি।
দেশের অর্থনীতি কতটা গতিশীল হবে, তা নির্ভর করে ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের ওপর। ব্যাংকিং খাতে যে সুশাসন নেই তা এখন প্রমাণিত। এই খাতের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক মালিকদের নানাভাবে সুবিধা শুধু দেয়া হয়নি, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তৃত্ব খর্ব করা হয়েছে। এমনকি ব্যাংকের সুদের হার কত হবে তাও নির্ধারণ করছেন ব্যাংক মালিকেরা। ব্যাংকের কার্যক্রমে মানুষের মধ্যে যে অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে, ব্যাংকগুলোর জন্য তা অশনিসঙ্কেত। পরিস্থিতি উত্তরণে সুশাসন নিশ্চিতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিক জায়গায় সঠিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।
আমরা মনে করি, ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারলেই কেবল অর্থ পাচারের মতো ঘটনা বন্ধ করা যাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement