২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
তিন সিটিতে নির্বাচন

অভিযোগ এখনো থামছে না

-

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সর্ব সাম্প্রতিক বক্তব্য হচ্ছে, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়ে আছে এবং তা থাকবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে তিনি তেমনটিই আশা করেন। জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে তিন সিটি নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার কথা হচ্ছে, তিন সিটিতে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হবে না।
এ ধরনের আশ্বাস তার কাছ থেকে অতীতে আরো বহুবার শোনা গেছে। খুলনার সিটি করপোরেশনের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন তিনি প্রশ্নমুক্ত করবেন বলেও জাতিকে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তার সে আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন দেশবাসী এ নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় দেখতে পায়নি। বরং জাতি দেখল এ নির্বাচনে অনিয়ম চলেছে আরো দক্ষতা ও সুকৌশলের সাথে। আর নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু নির্বাচন বলেই ঘোষণা দিয়েছে।
আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনেও যে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করার কোনো উদ্যোগ আয়োজন নেই, তা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে। রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের অভিযোগ ও শঙ্কা ততই বাড়ছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সরকারি দলের প্রার্থী ছাড়া অন্যরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে প্রার্থীদের এ অভিযোগ কেবলই বাড়ছে। প্রচারে সমান সুযোগ মিলছে না এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ করছেন কোনো কোনো প্রার্থী। খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও প্রার্থীদের কাছ থেকে একই ধরনের অভিযোগ এসেছিল। তখন নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন আশ্বাস দিলেও এসব নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটে, যা নির্বাচন কমিশনের তদন্তেও উঠে এসেছে। ফলে তিন সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে আরো ব্যাপকতা নিয়ে তেমনটি আশঙ্কা করছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা তো শুরু থেকেই এই আশঙ্কা করছেন। এর প্রমাণও তারা হাতেনাতে পেয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানীতে বসে সিইসি সবার জন্য সমান সুযোগের কথা বললেও এরই মধ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপির প্রার্থীদের অভিযোগÑ এক দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের পোস্টার লাগানো ও জনসংযোগে বাধা দিচ্ছেন; অন্য দিকে পুলিশ কারণ ছাড়াই তাদের নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। সিলেটে গত বুধবার রাতে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় দুই বিএনপি কর্মীকে ধরে পুলিশে দেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। বিএনপির নেতানেত্রীরা বলছেন, এ দু’জন তখন ধানের শীষের পোস্টার সাঁটাচ্ছিলেন। বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক তাৎক্ষণিক থানার সামনে অনশনের ঘোষণা দিয়ে অবস্থান শুরু করলে পুলিশ এ দু’জনকে ছেড়ে দেয়। বিএনপির অভিযোগÑ প্রচারকাজ শুরুর দিন থেকেই ধানের শীষের ব্যানার-পোস্টার লাগাতে বাধা দেয়া, পোস্টার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা, দলীয় কর্মীদের গ্রেফতার, মারধর ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেছেন, দু’দিনে জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে ১৮ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আগামী তিন সিটি নির্বাচন অনিয়ম, ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি, ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দিয়ে অবাধে সিল মারার মতো নানা অপরাধ গাজীপুর ও খুলনার রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে। সিইসির বারবার বাজানো রেকর্ডের আশ্বাস কোনো কাজেই আসবে না। তবে এর চেয়ে ভিন্ন কিছু করে দেখাতে পারলে সে কৃতিত্ব সিইসি নিশ্চয়ই পাবেন। তার কপাল থেকে বশংবদ সিইসির কলঙ্কতিলকটিও মুছে যাবে। জাতি তেমনটিই আশা করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement