২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের আহ্বান

সাড়া দিতে হবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে

-

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তেÍানিও গুতেরেস স্বীকার করে নিয়েছেন রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বিশ্ব ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গাশিবির পরিদর্শন শেষে ফিরে গিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে এই ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেছেন। দুঃখজনক হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো জাতিগত নিধন নিয়ে জাতিসঙ্ঘ ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকে অনেক কথা বলে এসেছে। বাস্তবতা হচ্ছে জাতিগত নিধনের বিষয়টি অনেক সময় ধরে মিয়ানমার বাস্তবায়ন করলেও এ কাজে বাধা দিতে কেউ কার্যকরভাবে এগিয়ে আসেনি। জাতিসঙ্ঘের পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকাও একই কথা বারবার বলছে; কিন্তু রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যেতে কার্যকর কোনো চাপ তারা তৈরি করছে না।
ওয়াশিংটন পোস্টের এই নিবন্ধে তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা কেন্দ্রে যে অমানবিক দৃশ্যাবলি দেখেছেন, তার মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি ওই নিবন্ধে আবারো স্বীকার করে নিয়েছেন রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনের শিকার। এই নিধনযজ্ঞ থেকে তাদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেছেন মা-বাবার সামনে তাদের শিশুসন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। নারী ও কিশোরীরা গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। শিবিরে গিয়ে তিনি সরেজমিন এই ভয়াবহ বর্ণনা শোনেন। পরিবারের এক সদস্যের সামনে তার বড় ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার মাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গুতেরেসের সামনে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, প্রাণ বাঁচাতে তিনি একটি মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু সেনাসদস্যরা সেখানে গিয়ে তাকে নির্যাতন করে, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে দেয়। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব লেখেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ত্রাস ঢুকিয়ে দিতে গত বছর নিরাপত্তাবাহিনী পদ্ধতিগতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তাদের সামনে দু’টি বিকল্পই দেয়া হয়েছে : হয় মৃত্যুর ভয় নিয়ে থেকে যাও নতুবা বাঁচতে হলে সব কিছু ছেড়ে চলে যাও। তিনি শরণার্থী সমস্যা নিয়ে বলেন, নিরাপত্তার জন্য দুর্বিষহ যাত্রা শেষে এই শরণার্থীরা এখন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় কঠিন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে, যা স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল শরণার্থী সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট। বাংলাদেশ সীমিত সম্পদের একটি দেশ। যেখানে বিশ্বজুড়ে বড় আর ধনী দেশগুলো বহিরাগতদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের জন্য নিজেদের সীমান্ত আর হৃদয় উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের সহমর্মিতা আর উদারতা সেরা মানবতারই প্রদর্শন এবং তা লাখো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। ওই নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, এই সঙ্কটের সমাধান হতে হবে বৈশ্বিক। অর্থ সংগ্রহের ব্যাপারটি কতটা হতাশাজনক সেটাও তিনি তুলে ধরেন। ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা আহ্বান করা হয়েছিল; কিন্তু পাওয়া গেছে এর মাত্র ২৬ শতাংশ। এ ঘাটতির অর্থ হলো, শিবিরে অপুষ্টি দেখা দেয়া, পর্যাপ্ত পানি আর স্বাস্থ্যসেবা সুদূরপরাহত, শরণার্থী শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। বর্ষাকালে শরণার্থীশিবির আরো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকছে। ত্বরিত যে অস্থায়ী বসতি নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো এখন ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিকল্প জায়গা খুঁজে সেখানে মজবুত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান জরুরি হয়ে পড়েছে।
নিবন্ধের শেষে তিনি আহ্বান রাখেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকার নিয়ে ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে এবং তাদের নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে থাকতে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি বলেন। মিয়ানমারের দরিদ্রতম অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন আর পুনর্গঠনের জন্য শুধু নয় পুনর্মিলন আর মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের জন্যও এটি দরকার। আমরা মনে করি, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব যে আহ্বান রেখেছেন তা বাস্তবায়নে অগ্রসর হবেন। বিশ্বসম্প্রদায়ও তার আহ্বানে সাড়া দেবে, ফিরে যেতে পারবে রোহিঙ্গারা।


আরো সংবাদ



premium cement
বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৮ এপ্রিল খুলে দেয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস চলবে শনিবারও মিরসরাইয়ে জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে লুট, মূল হোতা গ্রেফতার বৃষ্টি কামনায় ঈশ্বরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইসতিসকার নামাজ আদায় কুবিতে আল্টিমেটামের পর ভিসির কার্যালয়ে তালা ঝুলাল শিক্ষক সমিতি সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ শ্রমিক নিহতের খবরে ঈশ্বরগঞ্জে শোক দুর্যোগে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু কেন বাংলাদেশে? জবিতে ভর্তি পরীক্ষায় আসন বেড়েছে ৫০টি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : ওবায়দুল কাদের মাটির নিচে পাওয়া গ্রেনেড মাইন মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী

সকল