২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ে ১৩০ কোটি টাকা গচ্চা!

অবিলম্বে সিন্ডিকেটকে দমন করতে হবে

-

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণে সরকারের প্রায় ১৩০ কোটি টাকা গচ্চা দেয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা এক হয়ে এ জন্য নির্ধারিত দরের ৩৫ শতাংশ বেশি দামে দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। ফলে জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আবার এ জন্য দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু পুনঃদরপত্রে বেশির ভাগ মুদ্রণকারী দর আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগে প্রকাশ, এনসিটিবির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এটা করা হয়েছে।
একটি সহযোগী দৈনিক এসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে আরো জানায়, এই সিন্ডিকেট বা চক্রটি নি¤œমানের কাগজে মানহীন বই ছাপানোর কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। চলতি বছর শেষে সংসদ নির্বাচন হতে পারে বিধায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় চেয়েছে এবার কিছুটা আগেই বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ সম্পন্ন করতে। সে মোতাবেক, অক্টোবর মাসের মধ্যেই এ কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারসাজির দরুন বই মুদ্রণের কাজ বিলম্বিত হলে যথাসময়ে এই বই পৌঁছানো সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
২০১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সাড়ে ১১ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। এনসিটিবি এসব বই ছাপাতে প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করেছে প্রতি ফর্মা দুই টাকা ২৫ পয়সা। সব মিলে এই খরচের পরিমাণ ৩৫৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। গত ১২ এপ্রিল দরপত্র খুলে দেখা যায়, ফর্মাপ্রতি দর ধরা হয়েছে দুই টাকা ৭০ পয়সা থেকে দুই টাকা ৮২ পয়সা। এতে মোট ব্যয়ের পরিমাণ উল্লিখিত ব্যয়ের চেয়ে প্রায় ১১১ কোটি টাকা বেশি হবে। এ অবস্থায় ফর্মাপ্রতি প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে দুই টাকা ৬৯ পয়সা নির্ধারণপূর্বক আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু গত ২০ ও ২১ জুন দরপত্র উন্মুক্ত করা হলে আবার দেখা গেছে, মুদ্রাকরেরা জোট বেঁধে বই ছাপার ব্যয় আরো বেশি ধরেছেন। এর পরিমাণ প্রতি ফর্মার জন্য দুই টাকা ৯০ পয়সা। কিন্তু এর ভিত্তিতে বই ছাপানো হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ১৩০ কোটি টাকার মতো বেশি খরচ করতে হবে। অথচ একই মুদ্রাকরেরা গত বছর পাঠ্যবই ছাপানোর কাজের জন্য ১৮ শতাংশ কম দামে দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। পুনঃদরপত্রে অংশ নিয়েছে ২৫০টি প্রতিষ্ঠান। তাদের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক গ্যারান্টি একই ব্যাংকের একই শাখা থেকে নেয়া হয়েছে, যা অস্বাভাবিক এবং সিন্ডিকেট গঠনের আলামত। বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই জোট বাঁধায় এনসিটিবি তাদের কথামতো কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুনঃদরপত্রের কারণে ইতোমধ্যে সাত সপ্তাহ সময় নষ্ট হয়েছে। এখন সময় হাতে কম থাকায় নতুন করে দরপত্র আহ্বানের উপায় নেই। এ দিকে পাঠ্যবই ছাপাতে নি¤œমানের কাগজ গুদামজাত করেছে সিন্ডিকেটভুক্ত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রায় প্রতি বছর নি¤œমানের পাঠ্যবই সরবরাহের অভিযোগ করে থাকে। কিন্তু এনসিটিবি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নামমাত্র জরিমানা করে দায় সারতে চায়। বই মানসম্মত না হলে টেকসই হয় না, ছবি অস্পষ্ট হয়ে পড়ে; এমনকি বইয়ের কাগজে রোগজীবাণু পর্যন্ত থাকতে পারে।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির বক্তব্য, নির্বাচনের বছরে কাগজ ও কালির দাম বেশি। ডলারের দামও বেড়েছে। তাই দরপত্রে বেশি দাম দিতে হয়েছে। অপর দিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, মূল্যায়ন কমিটি পুনঃদরপত্রের ব্যাপারে চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশ করবে। আর বইয়ের মানের ক্ষেত্রে ‘ছাড় দেয়া হবে না’। এ ব্যাপারে এনসিটিবি ‘যথেষ্ট সতর্ক’।
বর্তমান সরকার তার একটি বিরাট অর্জন হিসেবে দেখাতে চাচ্ছে বছরের প্রথম দিনেই স্কুলপর্যায়ে পাঠ্যবই বিতরণকে। কিন্তু এ ব্যাপারে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে প্রথম থেকেই। সুশাসন ছাড়া কেবল অঢেল অর্থ বরাদ্দ দিলেই জনগণ উন্নয়নের সুফল পায় নাÑ এর একটি নজির পাঠ্যবই ইস্যু। আগের মতো এবারো কথিত সিন্ডিকেট এই পাঠ্যবই ছাপানোর সুবাদে রাষ্ট্রীয় অর্থের বিপুল অপচয় ঘটিয়ে গোষ্ঠিস্বার্থ পূরণে তৎপর বলে পত্রিকার খবরে দেখা যায়। ফলে বিশেষ করে অভিভাবকসহ দেশপ্রেমিক ও জনকল্যাণকামী নাগরিক মাত্রই উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। সরকার এখন থেকেই সজাগ হয়ে আলোচ্য সিন্ডিকেটের কারসাজি দমনে যথেষ্ট কঠোরতার পরিচয় দেবে বলেই সবার প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম

সকল