২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সড়কে এক দিনেই ৪৬ জনের মৃত্যু

বেপরোয়া যানবাহন ও চরম অব্যবস্থাপনা

-

বাংলাদেশের সড়ক যেন যাতায়াতমাধ্যম নয়, একটি মৃত্যুফাঁদ। আশঙ্কা থেকে যায় রাস্তায় নামার পর বাড়ি কিংবা গন্তব্যে না পৌঁছে প্রাণ হারানোর। প্রতিদিন যাত্রীমৃত্যুর মিছিল আমরা দেখতে পাচ্ছি। গত শুক্রবার এক দিনেই সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাবে, অনেক যুদ্ধক্ষেত্রের চেয়ে বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কে বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। এক একটি সড়ক দুর্ঘটনা মানে মৃত্যুর মিছিলে আরো কয়েকজন মানুষের নাম যুক্ত হওয়া। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা যারা সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করেন, তাদের পরিসংখ্যানকে ভারী করা ছাড়া এতে আর কিছুই হয় না। প্রতিটি দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাবধানতা অবলম্বনের অনেক কিছুই বাকি ছিল। একটি দুর্ঘটনা থেকে অনেক শিক্ষা নেয়ার থাকে; সেটি আমাদের দেশে হয় না। ফলে একই ধরনের মারাত্মক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে বছরের পর বছর।
সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, শুক্রবার এক দিনে ৪৬ জনের প্রাণ গেছে সড়কে। এর মধ্যে গাইবান্ধায় একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। দুর্ঘটনাটি ঘটে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে। পলাশবাড়ী এলাকায় যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে আরো ৪০ জন আহত হন। চালক বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারালে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে-মুচড়ে খাদে পড়ে যায়। রংপুরে আরেকটি দুর্ঘটনায় একটি ট্রাক দ্বিতল বাসকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ছয়জন প্রাণ হারান। বাসটি দাঁড়িয়ে পেছনের চাকা বদলাচ্ছিল। যাত্রীরা পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে বালু-বোঝাই ট্রাকটি ধাক্কা দেয় বাসটিকে। ওই সময় ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন হেলপার। অন্য দিকে চালক ঘুমাচ্ছিলেন। আরেকটি দুর্ঘটনায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকের চালক ও হেলপার নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, সাভার, টাঙ্গাইল, চুয়াডাঙ্গা, লক্ষ্মীপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, কুমিল্লা ও মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একই দিন আরো ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার একই ধরনের কারণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চালকের অবহেলা, অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতায় সড়কে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। আছে আঁকাবাঁকা সর্পিল রাস্তা। কিছু ক্ষেত্রে যাত্রী ও পথচারীদের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে নিঃসন্দেহে এর জন্য দায়ী দুর্বল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কিছু আন্দোলন আমাদের দেশে হয়েছে। সাধারণত কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি সড়কে প্রাণ হারালে এসব বিচ্ছিন্ন আন্দোলন দেখা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে জোরালো কোনো নাগরিক আন্দোলন দেখা যায়নি। যানবাহন চালনায় আমাদের দেশে সেভাবে নিয়মকানুন মানা হয় না। চালকের প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদান-সংক্রান্ত বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা যায়নি। এসব ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বাস্তবে মালিক-শ্রমিকের পক্ষে অবস্থান নেয়। ফলে তাদের অপরাধ সুস্পষ্ট হলেও উপযুক্ত বিচার করা যায় না। অন্য দিকে একজন চালক উপযুক্ত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই সনদ পেয়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে সড়কে যানবাহন চালাতে সনদেরও প্রয়োজন পড়ে না। কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশ করলেই চলে। এই অব্যবস্থাপনা সড়কে নিরাপদ যান চলাচলের নিশ্চয়তা দেয় না। এ ধরনের পরিস্থিতির আশু পরিবর্তন দরকার। অন্যথায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল অনিবার্য ঘটনা হিসেবে থেকে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement