২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে

এই স্রোত থামাতেই হবে

-

বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ বৃদ্ধির হার এখন সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। যুদ্ধ, সহিংসতা আর নানা ধরনের নির্যাতনের ফলে সারা বিশ্বে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ২০১৭ সাল থেকে ক্রমাগত পাঁচ বছরের মতো বেড়েছে। আফ্রিকার কঙ্গো সঙ্কট ও দণি সুদানের গৃহযুদ্ধ এবং গণহত্যার মুখে মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাংলাদেশে পালিয়ে আসার মতো ঘটনাও মুখ্য ভূমিকা রেখেছে এ ক্ষেত্রে।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের শেষনাগাদ বিশ্বে অন্তত ছয় কোটি ৮৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ২০১৭ সালেই বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ৬২ লাখ। অর্থাৎ দৈনিক ৪৪ হাজার ৫০০ জন অথবা প্রতি ২ সেকেন্ডে একজনের বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে।
বাস্তুচ্যুত ছয় কোটি ৮০ লাখের মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা দুই কোটি ৫৪ লাখ। এটি ২০১৬ সালের চেয়ে ২৯ লাখ বেশি। গত বছরের প্রায় আড়াই কোটি শরণার্থীর পাঁচ ভাগের এক ভাগের কিছু বেশি হচ্ছেন ফিলিস্তিনি। অন্যরা সিরিয়া, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, দণি সুদান ও সোমালিয়া থেকে এসেছেন। বিশ্বে এখন শরণার্থীর সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। জোরপূর্বক বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদকৃত মানুষের সংখ্যা থাইল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান।
বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী মূলত কম বয়সীÑ ৫৩ শতাংশই শিশু। বাংলাদেশে ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর যে ঢল নেমেছিল, তা গত এক দশকের মাঝে সবচেয়ে বড় শরণার্থী স্রোত হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসঙ্ঘ। আফ্রিকার রুয়ান্ডা গণহত্যার পর গত ১০ বছরে আতঙ্কিত লোকজনের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার এত বড় ঢল বিশ্ব আর দেখেনি। সর্বশেষ ধাপে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী বাংলাদেশে ছুটে এসেছে।
গত বছরের ২৫ আগস্টের পরবর্তী সর্বশেষ স্রোতসহ ১৯৭৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় রোহিঙ্গারা বিপুলসংখ্যায় বাংলাদেশে এসেছে। ১৯৯২ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে দুই লাখের বেশি শরণার্থী মিয়ানমারে ফিরে গেছে। সে সময় তালিকাভুক্ত ৯ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আটকা পড়ে। এর পর থেকে তাদের প্রত্যাবাসন বন্ধ হয়ে যায়।
এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে, মানুষ হিসেবে বিশ্ববাসী যতটা সভ্য হয়েছে, ঠিক ততটাই বর্বর হয়েছে। এ পরিস্থিতির আশু পরিবর্তন জরুরি। আমরা আশা করি, বিশ্বসম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে জাতিসঙ্ঘ এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement