২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ব্যাংক কমিশনসহ কয়েকটি কমিশন গঠন

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের দাবি যথার্থ

-

ব্যাংক খাতে দুর্নীতির শেষ নেই। গণমাধ্যমে আসা ব্যাংক খাতের নানা দুর্নীতি আর লুটপাটের খবর এ সত্যকেও তুলে ধরে। একইভাবে আছে সরকারি খাতের ব্যয়ে নানা ধরন ও মাত্রার দুর্নীতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের দুর্নীতি। দুর্নীতি ও অনিয়ম যেন আমাদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের সাধারণ মানুষ এ পরিস্থিতির অবসান চায়। এর জন্য উপায় একটাই, জবাবদিহিতা প্রতিটি ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা। এটুকু নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন কার্যকর কৌশল।
এমন প্রেক্ষাপটে গত পরশু দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা সুপারিশ করেছেন দেশে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠনের। এসব কমিশনের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকবিষয়ক কমিশন এবং সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন আগামী বাজেট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠন করার কথাও। গত পরশু রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একটি বাজেট সম্পর্কিত গোলটেবিল আলোচনায় এরা আরো বলেন, সরকারের উচিত বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতার উন্নতি বিধান করা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, সরকারের উচিত একটি সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন গঠন করা। এই কমিশন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থ যথার্থ ব্যয় নিশ্চিত করার কাজ করবে। তার এই দাবি যথার্থ বলেই আমরা মনে করি। কারণ, সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আন্তঃ মন্ত্রণালয় সমন্বয় ও মানবসম্পদের দক্ষতা এডিপির বর্ধিত পরিধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাড়েনি। এর ফলে এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, সরকারি অর্থেরও অপচয় হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবিত সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন গঠন এ পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম ব্যাংক খাতের বিদ্যমান সমস্যা দূর করার জন্য প্রস্তাবিত ব্যাংকবিষয়ক কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। আমরা মনে করি, এই কমিশন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। তা ছাড়া, এটি হওয়া উচিত সরকারের প্রভাবমুক্ত। কারণ, ব্যাংক মালিকেরা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে তুলছেন। তা ছাড়া, খেলাপি ঋণ ও বেনামি ঋণ নেয়ার পাহাড় জমেছে ব্যাংক খাতে। সরকারি ব্যাংকগুলো হয়ে উঠেছে লুটপাটের অবাধ ক্ষেত্র। এসব ব্যাংককে সরকার বাঁচিয়ে রাখছে জনগণের করের টাকায়। জানা গেছে, চলতি মাসেই মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারি ব্যাংকগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এসব ব্যাংক কয়েক বছর ধরে মূলধন ঘাটতি সমস্যায় ভুগছে। এসব ব্যাংকে দুর্নীতি আর লুটপাট সীমাহীন। এ প্রেক্ষাপটে ব্যাংকবিষয়ক কমিশন গঠনের প্রস্তাব একটি যথার্থ উদ্যোগ।
অপর দিকে, সরকারি ব্যয়ে রয়েছে ব্যাপক ব্যর্থতা। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে বারবার প্রকল্প ব্যয় সংশোধন করে ব্যয়ের অঙ্ক বাড়ানো হচ্ছে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ সমস্যা দূর করতে একটি সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন গঠনের দাবিও যথার্থ যৌক্তিক। আমরা মনে করি, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলের এসব কমিশন গঠনের প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement