২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
তামাক দেশের চতুর্থ বড় মৃত্যুর কারণ

থামাতে হবে এই নীরব ঘাতককে

-

গতকাল ছিল বিশ্ব তামাক দিবস। ওই দিনে তামাক সম্পর্কিত একটি উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যটি হচ্ছেÑ বাংলাদেশে যেসব কারণে বিপুল পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে চতুর্থ বড় কারণ হচ্ছে তামাকের কারণে মৃত্যু। তামাক এখন বাংলাদেশে রোগ সৃষ্টির ও মৃত্যুর জন্য বিপজ্জনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে এক লাখ ৬১ হাজার ২০০ লোক তামাকবাহিত রোগের কারণে মারা যাচ্ছে। এই তথ্য টোব্যাকো অ্যাটলাসের দেয়া। তা ছাড়া ২০০৫ সাল থেকে দেশে তামাক ছিল মানুষের মৃত্যুর চতুর্থ বড় কারণ। এ তথ্যটি জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও বলেছে, তামাকের ব্যবহারের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বাংলাদেশের জিডিপির ১.৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে ১৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে তামাকের এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে আমরা গতকাল পালন করেছি বিশ্ব তামাক দিবস ২০১৮। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার ফুসফুস ও হার্টের রোগের জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি। এর কারণে বিপুলসংখ্যক রোগী প্রতি বছর মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ, সেরিব্রাল ভাসকুলার ডিজিন, সিওপিডি ও শ্বাসকষ্ট রোগ। এসব রোগ সৃষ্টিতে তামাক একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সরকারি প্রতিষ্ঠান এমনটিই বলেছে। টোব্যাকো অ্যাটলাসের উপাত্ত মতে, এক লাখ ৭২ হাজারেরও বেশি শিশু (১০-১৪ বছর বয়সী) এবং দুই কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক (১৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী) লোকেরা প্রতিদিন ধূমপান করেন। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ধূমপান করে। তা ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ১.৮৬ শতাংশ ধূমপানের সাথে সংশ্লিষ্ট। ০.২ শতাংশ বালক শিশু এবং ০.২ শতাংশ মেয়ে শিশু ধূমপান করে। এর বাইরে ৩১.৫ শতাংশ বাংলাদেশী ধূমবিহীন তামাক ব্যবহার করে। টোব্যাকো অ্যাটলাস আরো জানিয়েছে, ২৫.৫৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৯.৬৮ শতাংশ মহিলা প্রতি বছর তামাকজনিত রোগের কারণে মারা যায়। সর্বমোট বাংলাদেশে এক লাখ ৬১ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশী তামাকজনিত রোগে মারা যায়।
ধূমপানবিরোধী আন্দোলনকারীদের অভিমতÑ সরকার ধূমপান নিয়ন্ত্রণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও সস্তা তামাকসামগ্রী বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়ক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশে তামাকের ওপর করারোপ ব্যবস্থাটি খুবই জটিল।
অনেকে মনে করে সিগারেট ও বিড়ির ওপর কর বাড়িয়ে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। সরকার ২০০৫ সালে পাস করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন। এটি কার্যকর করা হয় ২০০৬ সালে। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর কথা মাথায় রেখে এই আইন ২০১৩ সালে সংশোধন করে। এরপর ২০১৫ সালের ১২ মার্চ এই আইনের বিধি চূড়ান্ত করে; কিন্তু বাস্তবে এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। এখন দরকার এই আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করে এই নীরব ঘাতকের অবসান করা।


আরো সংবাদ



premium cement