২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ই-বর্জ্যরে ঝুঁকি বাড়ছে

প্রযুক্তির বিপদ সম্পর্কে সতর্কতা জরুরি

-

একবিংশ শতাব্দীর সর্বাধুনিক বিশ্বে এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জয়জয়কার। প্রযুক্তির জগতে নিত্যনতুন উদ্ভাবনের ঢেউ এসে লাগছে বাংলাদেশেও। এতে জীবনযাত্রায় গতিবেগ ও স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি নতুন বিপদও দেখা দিয়েছে। তা হলো, নানাবিধ ইলেকট্রনিক বর্জ্যরে কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিবেশদূষণ। এ প্রসঙ্গে একটি সহযোগী দৈনিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রযুক্তির অঙ্গনে নতুন নতুন সরঞ্জাম বা পণ্য আসার পাশাপাশি বাতিল হয়ে যাচ্ছে পুরনো সরঞ্জাম ও উপকরণ। নষ্ট হয়ে যাওয়া টেলিভিশন সেট, রেফ্রিজারেটর, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রিক লাইট প্রভৃতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বিরাট বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে। তবু আজ পর্যন্ত এই ইলেকট্রনিক বর্জ্যরে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা ধ্বংসের ব্যাপারে কোনো আইন বা নীতিমালা নেই।
আলোচ্য প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবেশবিদ ড. হাফিজা খাতুনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এসব পণ্যে বিভিন্ন কেমিক্যাল মেশানো থাকে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলা হয় ব্যবহারের অনুপযোগী ই-পণ্য। কিন্তু এগুলো মাটিতে মেশে না বলে পরিবেশের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। আইনের মাধ্যমে এ ধরনের বর্জ্যরে সম্ভাব্য পুনঃব্যবহারসহ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য বলে তার অভিমত।
একটি এনজিওর গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে গড়ে জমে উঠছে ২০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য। তবু এ সম্পর্কে আইন করা হয়নি আজ পর্যন্ত। অথচ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক আইন রয়েছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) পরিচালিত গবেষণার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১১-১২ সালে এ দেশে বাতিল বলে গণ্য ই-বর্জ্যরে পরিমাণ ছিল ৫১ লাখ মেট্রিক টন। মাত্র দুই বছরেই তা দ্বিগুণের বেশি হয়ে দাঁড়ায় এক কোটি ১০ লাখ টনে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন সেট থেকে সৃষ্টি হয় ৫১ হাজার টনেরও বেশি বর্জ্য। বর্জ্যরে মাত্রা সর্বাধিক, যার পরিমাণ আট লাখ ৬০ হাজার টন। কম্পিউটারের বর্জ্য ৩৪ হাজার ৪০০ টন। এ দিকে দেশের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে আনা প্রতিটি জাহাজে বিপুল অব্যবহৃত বৈদ্যুতিক পণ্য থাকে। তাই এর থেকে প্রাপ্ত ই-বর্জ্যরে পরিমাণ সর্বাধিক, যা প্রায় ৯০ লাখ মেট্রিক টন। তা ছাড়া, সিএফএল এবং মার্কারি বাতি, থার্মোমিটারসহ চিকিৎসাসরঞ্জাম ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রের বর্জ্যরে পরিমাণ দুই লাখ ১০ হাজার টনের বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বছরে তিন কোটি মোবাইল ফোন সেট দেশে আনা হলে ধরা যায় সমসংখ্যক ফোন বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এগুলো পরিবেশের জন্য তৈরি করছে মারাত্মক ঝুঁকি। দেশে প্রতি বছর যত ই-বর্জ্য সৃষ্টি হয়, এর ২৫-৩০ শতাংশই আসছে মোবাইল ফোন থেকে। এসব বর্জ্য খাদ্যচক্রের মধ্য দিয়ে মানবদেহে অনুপ্রবেশ করে। এই বর্জ্যে আছে সিসা, পারদ, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামের মতো ধাতু; যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। উন্নত দেশগুলোতে মোবাইল বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাতিল হওয়া সেট আবার কিনে নিতে বাধ্য থাকে। এ দেশেও সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
জানা গেছে, ই-বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট ভাগাড় নেই। ফলে ভাঙাড়ি দোকানে এগুলো স্তূপ করে রাখা হয়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, বিষাক্ত বর্জ্যে মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং এতে সর্বাধিক ক্ষতি হচ্ছে শিশুদের। তাদের দৈহিক বিকাশ হচ্ছে বিঘিœত। জানা যায়, দেশে মোবাইল সংযোগ প্রায় ১৩ কোটি এবং টিভি সেট আছে দুই কোটির বেশি। বাংলাদেশের মানুষ বছরে গড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করছে। অপর দিকে, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধি প্রণয়নের পরও ছয় বছর ধরে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।
আমরা মনে করি, নিত্যনতুন প্রযুক্তির সুবিধা সম্পর্কে জানা আর সমস্যা সম্পর্কে সতর্কতা দুটোই থাকা দরকার। কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য

সকল