২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চাঁপাইয়ের আমগাছে ক্ষতিকর হরমোন প্রয়োগ

রোধ করতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের

-

চাঁপাই নবাবগঞ্জের আমের সুনাম বাংলাদেশের বাইরে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সুস্বাদু এই আম ইউরোপ আমেরিকায় রফতানি হচ্ছে। আমের স্বাদ ও ফলন বাড়ানো নিয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কাজ করেছে। তারা আমবাগানের মালিকদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছে। এতে করে উত্তরাঞ্চলের আম উৎপাদকেরা উপকৃত হচ্ছেন। এর মধ্যে একটি অসাধু চক্রও রয়েছে, এরা উত্তরাঞ্চলের আমের শত্রু বলা যায়। তারা চাষিদের বেশি উৎপাদনের লোভ দেখিয়ে একধরনের হরমোন প্রয়োগে তাদের উদ্বুদ্ধ করছে। চাষিরা এ হরমোন প্রয়োগের তাৎক্ষণিক উপকারিতা পেয়েছে। অর্থাৎ আমের বেশি ফলনের মাধ্যমে বেশি লাভ করতে পেরেছে, কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে আমগাছের ক্ষতি করার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি। বিশেষ করে যারা এক-দুই বছরের জন্য বাগান ইজারা নিচ্ছেন, তারা এই ক্ষতিকর হরমোন প্রয়োগ করছেন। ক্ষতিকর হরমোনটি আমদানি করা হচ্ছে ভারত থেকে।
আমগাছের শিকড় কেটে তাতে এই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এতে করে গাছভর্তি আম ধরে এবং সেই আমের আকারও হয় বড়। যারা এক-দুই বছরের জন্য বাগান ইজারা নেন, তাদের জন্য বেশি লাভ এনে দেয়। পরিণামে গাছের বৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি কোনো কোনো গাছ জীবনীশক্তি হারিয়ে মারা যায়। এতে করে বাগানের মূল মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ২০০৯-১০ সাল থেকে বাংলাদেশে এই হরমোনের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম প্যাকলোবুট্রাজল। বাণিজ্যিক নাম কালটার। চোরাই পথে ভারত থেকে এই হরমোন আমদানি করা হয়। এই হরমোন মাত্রা অনুযায়ী সীমিত ব্যবহার হতে পারে। তবে সেটা ১০ বছরের নিচে কোনো গাছে ব্যবহার করা যায় না। যেই মাত্রায় এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে, সেটি মানা হচ্ছে না। এর ক্ষতিকর পরিণতির ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই হরমোন গাছের বেড়ে ওঠা থামিয়ে দিয়ে সব শক্তি ফুল-ফলের দিকে পাঠিয়ে দেয়। এতে গাছে প্রচুর ফল আসে। নিয়মানুযায়ী, এই হরমোন ব্যবহার করলে সেই গাছকে প্রচুর পরিমাণে অন্যান্য খাবার দিতে হয়। এটি একবার ব্যবহার করলে তিন বছরের মধ্যে আবার ব্যবহার করা যায় না। ব্যবহারকারীরা এর কোনো নিয়মকানুন মানছে না। ফলে এই হরমোনের এলোপাতাড়ি ব্যবহারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে। কোনোভাবেই নিয়মের বাইরে এই হরমোন ব্যবহার করতে দেয়া উচিত নয়।
সময় থাকতে সতর্ক হতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের আম শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এ ব্যাপারে দেশে আইন রয়েছে। কর্তৃপক্ষকে অসাধু লোভী বাগানমালিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এর মধ্যে বাগান ইজারা নেয়া আম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগ করেছেন। ওই সব অভিযোগ গুরুত্বের সাথে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। ক্ষতিকর হরমোনটির চোরাকারবারি থেকে শুরু করে এর ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করতে হবে। নিয়মের বাইরে গিয়ে যারা এর ব্যবহার করেছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমবাগানের ক্ষতির ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এই হরমোন প্রয়োগে যেসব আম উৎপাদিত হচ্ছে তা শরীরের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার। সতর্ক হতে হবে বাগানের প্রকৃত মালিককে। তাকে নিশ্চিত করতে হবে ইজারাদাররা তার বাগানের আমগাছে এই হরমোন প্রয়োগ করছে কি না। এ জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement