২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খেলাপি ঋণের দুই-তৃতীয়াংশই ১০ ব্যাংকের দখলে

খেলাপি ঋণের দুই-তৃতীয়াংশই ১০ ব্যাংকের দখলে - ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের দুই-তৃতীয়াংশই ১০ ব্যাংকের দখলে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, মোট এক লাখ ১৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে ৭৫ হাজার টাকাই রয়েছে এই ১০ ব্যাংকের, যা মোট খেলাপি ঋণের সাড়ে ৬৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত সেপ্টেম্বরভিত্তিক তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু তার বেশির ভাগই পরিশোধ করছেন না। নানা প্রভাব খাটিয়ে বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ বের করে নেন। আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ঋণের বড় অংশ ফেরত পাওয়া যেত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অনীহা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকানায় যারা আছেন, তারা নামে-বেনামে সাধারণ আমানতকারীদের অর্থঋণ আকারে বের করে নিচ্ছেন। কিন্তু তা পরিশোধ করছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে হিসাবের মারপ্যাঁচে ওই ঋণখেলাপি আকারেও দেখানো হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। আবার নানা পরিস্থিতির কারণে ওই সব পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, কোনো কথাও বলতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আবার অন্য বড় উদ্যোক্তারাও ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। অন্য দিকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণ করা হয়। অতীতেও এ ধরনের অনেক ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। আবার এসব ঋণ পরিশোধ না করারও প্রবণতাও বেশি। এর ফলে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ অনেক বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন মাস অন্তর ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন’ এ উল্লেখ করা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের দখলে রয়েছে ৫৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের সাড়ে ৪৭ শতাংশ। বাকি ৫২ ব্যাংকের রয়েছে ৬০ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। আর শীর্ষ ১০ ব্যাংকের হিসাবে ৪৭টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বা সাড়ে ৩৫ শতাংশ। আর ১০ ব্যাংকের রয়েছে সাড়ে ৬৪ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয় বড় ঋণখেলাপিদের। মাত্র ২ ও ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৫০০ কোটি টাকা ও এক হাজার কোটি টাকার ওপরের ঋণখেলাপিদের ঋণ নবায়ন করা হয়। এ ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ নিয়ে মাত্র ১৪টি শিল্প গ্রুপ ১৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করে নেন। ঋণখেলাপিদের খাতা থেকে নাম কাটিয়ে আবারো ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেন। কিন্তু আগের ঋণ আর পরিশোধ না করায় ওই ঋণ এখন আবারো খেলাপিদের পরিণত হয়েছে।

বিভিন্ন সময় বিনা ডাউন পেমেন্টেও ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয় বড় ঋণখেলাপিদের। এরই ধারাবাহিকতায় বিদায়ী বছরে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সুদহারেও ছাড় দেয়া হয়। অর্থাৎ বেশি সুদে ঋণ নিলেও এ সুবিধার আওতায় এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরের ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকেই এ রকম আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরের খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এর আগে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আতাউর রহমান প্রধান জানান, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ নবায়নের জন্য গত বছর দুই হাজার ৮০০ আবেদন পড়ে সোনালী ব্যাংকে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৮৫টি আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। এতে ১০ বছরের জন্য দুই হাজার ৬২৮ কোটি টাকার মন্দমানের খেলাপি ঋণ এ সুবিধার আওতায় নবায়ন করা হয়েছে। সব মিলেই সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে।


আরো সংবাদ



premium cement