২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মত বিনিময় সভায় সোনালী ব্যাংক এমডি

৩৭ সরকারি সেবায় ফি নেয় না সোনালী ব্যাংক

৩৭ সরকারি সেবায় ফি নেয় না সোনালী ব্যাংক - ছবি : সংগৃহীত

গ্রাম থেকে শহরে দেশব্যাপী ১ হাাজর ২২৪টি শাখা রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। এসব শাখার মাধ্যমে সরকারের ৫১টি সেবার মধ্যে ৩৭টি সেবার কোনো ফি অর্থাৎ কোনো সেবা মাশুল নেয়া হয়না। মাত্র ১০ টাকা দিয়ে কৃষকের ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয় একমাত্র সরকারি ব্যাংকেই, যা অন্য ব্যাংকসমূহে আশাও করা যায়না। স্বাধীনতার পর থেকে ৮০ দশক পর্যন্ত যে বড় বড় শিল্পকারখানা ও উদ্যোক্তা শ্রেণী সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমেই হয়েছে। অর্থনীতির বিনির্মাণে কৃষকের ঋণ দেয়া হয়েছে। এতে মাঠ থেকে ব্যাংকের টাকা ফেরত আসেনি, কিন্তু সবুজ হয়েছে মাঠ। কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেছে। এ কারণে এক সময় সাড়ে সাত কোটি মানুষের যেখানে খাদ্য সংকট ছিল, আজ ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। তাই সরকারি ব্যাংকগুলোকে ঢালাও ভাবে দোষারোপ না করে অর্থনীতিতে এর অন্তর্নিহিত প্রভাব বিবেচনা করতে হবে।

কথাগুলো অনেকটা আবেগ নিয়ে বলছিলেন দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক সোনালীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো: আতাউর রহমান প্রধান। তিনি বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমানিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৯৬ হাজার কোটি টাকার এলসি খোলা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে এলসি কমিশন পেতো। কিন্তু ব্যাংকের মালিক যেহেতু সরকার, আর সরকারের কার্যক্রম যেহেতু জনগণের জন্য, সোনালী ব্যাংক তাই সরকারের কাছ নিকট থেকে এলসির কোনো কমিশন নেয়নি। অথচ এ ৫ হাজার কোটি টাকার কমিশন পেলে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি অনেকাংশেই কমে যেতো। এভাবেই সোনালী ব্যাংক জনগণের সেবা দিয়ে আসছে।

বুধবার সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত গণমাধ্যমের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় আতাউর রহমান প্রধান এ কথা বলেন। ৩৫ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের ৩২ বছরই কেটেছে তার সোনালী ব্যাংকে। মাঝে কর্মসংস্থান ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালনের পর আবারও তিনি সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে অধিক সেবার বিষয়ে আতাউর রহমান প্রধান বলেন, অনেকেই বলে থাকেন সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারি ব্যাংকের সেবার মান ভাল। কিন্তু শাখা ও লোকবলের তুলনায় সোনালী ব্যাংকের সেবার মান এখনো অনেক ভাল। এ বিষয়ে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ২৪০টি শাখা পরিচালিত হয় যেখানে ২০ হাজার লোকবল দিয়ে, সেখানে সোনালী ব্যাংকের ইউনিয়ন থেকে শহর পর্যন্ত ১ হাাজর ২২৪টি শাখায় লোকবল রয়েছে মাত্র ১৯ হাজার। তাও আবার গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন নিয়োগ হয়েছে ৫ হাজার। এরপরেও অনলাইন ও অটোমেশনের মাধ্যমে সাধারণ আমানতকারীর দৌরগোড়াই সেবা পৌছে দেয়া হচ্ছে। তিনি আশা করেন, শতভাগ অটোমেশন ও অনলাইন করা হলে, সোনালী ব্যাংকের সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিচালন ব্যয়ও কমে আসবে।

খেলাপি ঋণের বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি বলেন, ১৯৭২ সালে যখন শিল্প ঋণ বিতরণ শুরু করি, তখন আমাদের অভিজ্ঞতাও যেমন কম ছিল, তেমনি শিল্প উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতাও কমছিল। এ কারণে ওইসময় যেসব শিল্পে খেলাপি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল তার বড় একটি অংশ খেলাপি হয়ে যায়।

এদিকেও খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করতে কৃষককে নানা স্কীমে ঋণ দেয়া হয়। যা ফেরত আসেনি। কিন্তু এতে খাদ্য উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি কৃষিভিত্তিক শিল্পও গড়ে উঠেছে। বেসরকারি ব্যাংকের বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই ৮০ দশকে সোনালী ব্যাংকের ঋনগ্রহীতা ছিল। সবমিলে সোনালী ব্যাংকের ওইসময়ে খেলাপি ঋণ বেশি ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত যেসব ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে তা গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করেই ঋণ বিতরণ করা হয়। এ কারণে নতুন ঋণে খেলাপি ঋণ কমে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ দিনে চলে আসা পুঞ্জিভ’ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তারপরেও আমরা খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আগের বছরে যেখানে খেলাপি ঋণের হার ছিল মোট ঋণের প্রায় ২৮ শতাংশ, গত বছর শেষে তা কমে নেমেছে ১৯ শতাংশ। আমরা চলতি বছর শেষে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। তবে আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে তা সিঙ্গেল ডিজিট, অর্থাৎ এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনা।

এক প্রশ্নের জবাবে সোনালী ব্যাংকের এমডি বলেন, গত বছর সোনালী ব্যাংক তিন হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ আদায় করেছেন। গত বছরে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ২ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা নিয়মিত করা হয়েছে। আবেদন পড়েছিল ২ হাাজর ৮০০টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৫৮৫টি। সরকারের এই সিদ্ধান্তে যথেষ্ট সাড়া পাওয়া গেছে।

আতাউর রহমান প্রধান বলেন শেয়ার বাজার চাঙ্গা রাখতে সোনালী ব্যাংক আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি গতবছর সোনালী ব্যাংকের ১৭৩০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফাকে বিশেষ অর্জন বলে তিনি মনে করেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সোনালী ব্যাংকের এমডি বলেন পদ্মা ব্যাংকে তার ব্যাংকের বিনিয়োগ দেশের ব্যাংক খাতকে সুরক্ষারই অংশ। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনের সাথে আমাদের দেশের ব্যাবসায় প্রভাব পরবে বলে তিনি মনে করেন। সোনালী ব্যাংকের ১২২৪ টি শাখাই অনলাইনের আওতায় আসায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা প্রদান সহজতর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মতবিনিময় সভায় সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জেনারেল ম্যানেজাররা উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল