২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ব্যাংকে জালিয়াতি রোধে অসাধু গ্রাহকদের তথ্যভাণ্ডার হচ্ছে

- সংগৃহীত

অসাধু গ্রাহকদের সাথে ব্যাংক লেনদেনে কঠোরতা আরোপ করা হচ্ছে। জালিয়াতির সাথে সম্পৃক্ত গ্রাহকরা যাতে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নতুন ব্যাংক হিসাব খুলে ব্যাংকিংসেবা অব্যাহত রাখা বা নতুন অপরাধের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্য এসব গ্রাহকের তথ্য সংবলিত আলাদা একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি নীতিমালা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রথম লেনদেনের অবকাঠামো হিসেবে বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ (বিএসিএইচ) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই পেমেন্ট এবং সেটেলমেন্টে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ পদ্ধতিতে মাইকার (এমআইসিআর) চেকের মাধ্যমে গ্রাহক স্বল্প সময়ে লেনদেন করতে পারলেও এক ধরনের গ্রাহক কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ তছরুপ করে আসছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা ব্যাংকের চেকবই জাল বা পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে অন্য হিসাব থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে। এ ধরনের অনেক গ্রাহকই এক ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে অন্য ব্যাংকে হিসাব খোলা বা বিদ্যমান হিসাবের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করে। এ ধরনের গ্রাহক পুরো ব্যাংক ব্যবস্থার জন্যই বিপজ্জনক ও হুমকিস্বরূপ বলে মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, এ ধরনের জালিয়াতি সংঘটনকারীদের কোনো ব্যাংকে বা কেন্দ্রীয়ভাবে তথ্যভাণ্ডার নেই। এ কারণে এসব জালিয়াতিকারীরা অন্য ব্যাংকে হিসাব খুলে আবার সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন বা ব্যাংকসেবা গ্রহণ করেন। আর্থিক খাতের সামগ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের গ্রাহকদের চিহ্নিত করা আবশ্যক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ জালিয়াতি প্রতিরোধে ব্যাংক হিসাব খোলা বা বিদ্যমান গ্রাহকদের হিসাবের ঝুঁকি নির্ণয়ে কেওয়াইসি (গ্রাহককে চেনা) ফরমে গ্রাহক যে তথ্য দাখিল করেন তার সাথে গ্রাহকের আগের আচরণ জানার ব্যবস্থা করা হলে জালিয়াতি রোধে ফলপ্রসূ হতে পারে। বর্তমানে গ্রাহকের আচরণগত অসাধুতার কোনো তথ্য প্রাপ্তির ব্যবস্থা ব্যাংকগুলোর কাছে নেই। ব্যাংকগুলোকে এ তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারলে সম্পর্ক স্থাপনের আগে ব্যাংকগুলো অসাধু ব্যক্তির বিষয়ে সতর্ক হতে পারবে এবং সে বিষয়ে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

জানা গেছে, কোনো ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী জালিয়াতি বা অর্থ তছরুপের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলে তার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষিত করা হয়। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে করপোরেট মেমেরারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএমএস) নামক একটি তথ্যভাণ্ডার রয়েছে। ব্যাংকগুলো নতুন নিয়োগ বা কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিষয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজন হলে সিএমএমএস থেকে সংগ্রহ করতে পারে। জালিয়াতির সাথে জড়িত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিএমএমএসের মতো অনুরূপ একটি তথ্যভাণ্ডার থাকলে গ্রাহক সম্পর্কে সহজেই তার আচরণগত অবস্থার তথ্য সহজেই ব্যাংক জানতে পারবে। এতে ব্যাংকের জালিয়াতি অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জালিয়াতির সাথে জড়িত অসাধু গ্রাহকদের শনাক্ত করতে একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। তথ্যভাণ্ডারে গ্রাহকের পিতা-মাতার নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি নম্বর, টিআইএন নম্বর, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, গ্রাহকের সংঘটিত জালিয়াতির বিবরণ ও কোনো আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হলে তার বা প্রদত্ত শাস্তির বিবরণ সংরক্ষণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement