২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

খেলাপি ঋণ ও টাকা পাচার খতিয়ে দেখতে ৫ ব্যাংকে বিশেষ অডিট

অডিট ফার্ম নিয়োগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৮ সদস্যের কমিটি
-

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং দেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য খতিয়ে দেখতে আগামী বছরের শুরুতে পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ওপর বিশেষ অডিট কার্যক্রম চালাবে সরকার। এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। অডিট চালানোর জন্য নিরীক্ষা ফার্ম নিয়োগ ও এর কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় করতে গত বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের একটি কমিটি পুনর্গঠনও করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব অডিট ফার্ম নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে এই কমিটির কাজের জন্য ৮ দফা একটি কর্মপরিধিও ঠিক করে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে : এই কমিটি বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে অডিট ফার্ম নিয়োগের জন্য পিপিআর ২০০৮ (সরকারি ক্রয় নীতিমালা) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রণয়ন করবে। বিশেষ অডিট কার্যক্রম পরিধি নির্ধারণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক নিরীক্ষা ফার্ম, ব্যাংকসমূহ ও সিএ ফার্মের সাথে সমন্বয় সাধন করবে। সিএ ফার্মকে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী ও অন্যান্য তথ্য প্রদানসহ যাবতীয় সহায়তা প্রদান করবে। অডিট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকিংখাতে ঋণ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্ধারণে উদ্যোগ গ্রহণ। ওয়ার্কিং কমিটি ১৫ দিন পরপর সভা করে নিরীক্ষা কার্যক্রমের অগ্রগতি সচিব-মুখ্য হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করবে। সুষ্ঠু ও ফলপ্রসূভাবে নিরীক্ষা সম্পদানে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রদত্ত দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কমিটি প্রয়োজনে ব্যাংক ও আর্থিক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যেকোনো কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করতে পারবে।

এ ছাড়া কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে বলা হয়েছে, এগুলো ছাড়াও কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ২০১৯ সালে ১৫ মে মাসে জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর-৫ এর আওতায় গ্রাহক কর্তৃক পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত প্রতিটি আবেদনের বিষয়ে ব্যাংকভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে গৃহীত কার্যাবলী হালনাগাদ অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া সুলতানাকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন- একই বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শুকুর আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক যথাক্রমে, মোহাম্মদ এবনুজ জাহান, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ ইউসুফ আলী এবং বেলায়েত হোসেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব মৃত্যুঞ্জয় সাহা এবং বেসিক ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাসুদ-উর রহমান।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নির্দেশে চলতি বছরের মে মাসে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের কার্যক্রমের ওপর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নিরীক্ষা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এ জন্য একটি কমিটিও গঠন কার হয়েছিল। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ প্রক্রিয়া শুরু করতে কয়েক মাস চলে যায়। এখন আবার নতুন করে অডিট ফার্ম নিয়োগ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে এ সম্পর্কিত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।

এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমডিদের কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি দেশ থেকে অবৈধ পন্থায় টাকা পাচারের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এসব ঘটনায় সরকার নিরপেক্ষ অডিট ফার্ম দিয়ে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এ বিশেষ অডিটের মাধ্যমে ব্যাংক অব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের অবৈধ আর্থিক কর্মকাণ্ড শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে সরকার ঘোষিত ব্যবসাবান্ধব আর্থিক খাত সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। একই সাথে সৎ, যোগ্য ও উদ্যোমী ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে প্রয়োজনীয় সমর্থক ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে। যা শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ ও শিল্প প্রসারকে ত্বরান্বিত করবে। এর ফলে তারা দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় প্রদায়ী শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারবেন। এ ছাড়া এ অডিটের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ কার্যক্রম নিরপেক্ষ মূল্যায়ন সম্ভব হবে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বিশেষ অডিট পরিচালনার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সেই চিঠিতে কয়েকটি দিক উল্লেখ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয় ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিমের বাস্তব অবস্থা নিরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ব্যাংকগুলো মূলধনী যন্ত্রপাতি, সহায়ক সামগ্রী, কাঁচামাল মজুদ ও খুচরা যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যেখানে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে তার প্রতিটির আমদানিকারক ও রফতানিকারকের তথ্য পর্যালোচনা করা হবে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, উল্লিখিত সময়ে রফতানিকারক ও রফতানিভিত্তিক বিবরণ বিশেষ করে রফতানি বিল ক্রয়, রফতানি প্রণোদনা ও ঋণ দেয়া এবং রফতানি বাবদ রাজস্ব আয়ের তথ্য পর্যালোচনাও করা হবে। এসব তথ্য ছক আকারে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে পাঠাতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে চার প্রক্রিয়ায় ৫৯০ কোটি ডলার (দেশীয় মুদ্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে।

সংস্থাটির তথ্যমতে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা দেশের চলতি বছরের (২০১৮-১৯) জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা। টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিংখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ একলাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তবে অবলোপনকৃত ঋণ যোগ করা হলে খেলাপি ঋণ দাঁড়াবে দেড় লাখ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement
জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

সকল