২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণে প্রভিশন সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংক

- ফাইল ছবি

ঋণখেলাপিদের বিভিন্নভাবে ছাড় দেয়ায় ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বলা চলে ঋণের বড় একটি অংশই এখন খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকগুলো বেকায়দায় পড়ে গেছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। অনেকেই আয়ে কুলাতে না পারায় প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলে ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকেরই প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।

বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (৩ সেপ্টেম্বর-ভিত্তিক) প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্র খাতের সোনালী, রূপালী এবং বেসিক ব্যাংক রয়েছে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংক, সমস্যাকবলিত বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের ১২ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের কথা ছিল সাত হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পেরেছে পাঁচ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে দুই হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংকের চার হাজার ৬২৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে দুই হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণের কথা ছিল। কিন্তু আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে এক হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৯৯৬ কোটি টাকা।

এ দিকে বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকও প্রভিশন ঘাটতি থেকে বের হতে পারছে না। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে তিন হাজার ২১ কোটি টাকা। ব্যাংকটির এ সময়ে আট হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে পাঁচ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণের কথা ছিল। কিন্তু সংরক্ষণ করতে পেরেছে দুই হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা।

এ দিকে সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে দুই হাজার ৮৩২ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৮৮ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ৩৩১ কোটি টাকা, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১১৩ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৯৫৮ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৬৩ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৩৩ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১২৮ কোটি টাকা এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের ২৭৯ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানান, নানাভাবে ঋণখেলাপিদের ছাড় দেয়া হচ্ছে। ঋণ পুনঃতফসিলিতে ছাড় দেয়ার পর ২০১৫ সালে ঋণ পুনর্গঠনের নামে ১ ও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ দীর্ঘ মেয়াদে নবায়ন করা হয়। সবচেয়ে মারাত্মক হয়েছে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরের জন্য ঋণ নবায়নের নীতিমালা।

এ নীতিমালার কারণে যারা আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন, তাদের অনেকেই এ সুযোগ নেয়ার জন্য ঋণ পরিশোধে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ঋণখেলাপিদের ঘন ঘন ছাড়ের কারণে ব্যাংকগুলোর নগদ আদায় কমে গেছে। আর নগদ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমে গেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকাই কুঋণ, বা আদায় অযোগ্য ঋণ। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে বেশি হারে।

জানা গেছে, আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় মুনাফা থেকে। বর্ধিত হারে মুনাফা সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর নিট আয়ও কমে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি ঋণঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সবমিলে ব্যাংকগুলো নাজুক আবস্থায় পড়ে গেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে খেলাপি ঋণ বাড়তেই থাকবে, যা পুরো অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।


আরো সংবাদ



premium cement
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ

সকল