২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৫ বছরে বাংলাদেশের ঋণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে

৫ বছরে বাংলাদেশের ঋণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে - ছবি : সংগৃহীত

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশী ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে ২ শতাংশে এসেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা বেড়ে আবারো ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দায়দেনার সঠিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বাংলাদেশকে কঠিন শর্তের বৈদেশিক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে হবে; যাতে এই ঋণ ভবিষ্যতে দেশের জন্য বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়।

গতকাল বুধবার জাতিসঙ্ঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) প্রকাশিত স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি প্রতিবেদন ২০১৯ এ বাংলাদেশ সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে। আঙ্কটাডের পক্ষে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। রাজধানীর পল্টনের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশসহ ৪৭টি এলডিসি আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অর্থপাচারের পরিমাণ সরকারের রাজস্ব আহরণের ৩৬ শতাংশ। এই পাচার বন্ধ করতে পারলে আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়ত, যা কিনা দেশের উন্নয়নের কাজে অর্থায়ন করা যেত।

এ বিষয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, আমাদের আগের গবেষণায় দেখা গেছে, এই পাচার কার্যক্রমের ৯০ শতাংশ সংগঠিত হয় আমদানি-রফতানির আড়ালে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ তিন ধরনের ঘাটতির মধ্যে থাকে। ১. বাংলাদেশের জাতীয় সঞ্চয় কম। এ জন্য বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের মধ্যে একটি ঘাটতি রয়েছে। ২. বাংলাদেশ যেভাবে সরকারি ব্যয় করে তা সম্পূর্ণভাবে কর আহরণের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হয় না। ৩. আমাদের চলতি হিসাবেও ঘাটতি রয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশ এখন অনুদান বা নমনীয় ঋণ থেকে কঠিন শর্তের ঋণের দিকে যাচ্ছে। অবকাঠামো খাতে কঠিন শর্তের ঋণ পাওয়া যাবে। কারণ অবকাঠামো নির্মাণ করলে দ্রুত সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো সামাজিক খাতে কঠিন শর্তের ঋণ পাওয়া যাবে না। তাই এই খাতের অর্থায়ন চাহিদা মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ আহরণ বাড়াতে হবে। তবে এর পরও সামাজিক খাতে বিদেশী সাহায্য পাওয়ার জন্য আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিদেশী ঋণ নিলেও দায়দেনা পরিস্থিতি যেন আয়ত্তে থাকে। সাশ্রয়ীভাবে বিদেশী অর্থ ব্যবহারে পর্যালোচনা করার সময় এসেছে। স্বল্পোন্নত অনেক দেশ বেশি ঋণ নিয়ে নিজেদের পরিস্থিতি কঠিন করে ফেলেছে।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে দেশের সামাজিক ব্যবস্থা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৩৭ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে সামাজিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য নীতিগত পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলডিসির টেকসই উন্নয়নে রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ১৫ শতাংশ দরকার। এলডিসিগুলোর গড় রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ২০০০ সালে ছিল মাত্র ১১ শতাংশ। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত এখনো ৯ শতাংশের মতো। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের কর আহরণ প্রক্রিয়া এখনো দুর্বল।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের ইতিহাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এই দুটো দেশই ২০১৮ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডের সবগুলোতেই নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে এলডিসি প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। এ ছাড়া বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তৌফিকুল ইসলাম খান এলডিসি রিপোর্ট প্রকাশকালে বলেন, বৈদেশিক অনুদান নির্ভরতা কমলেও বৈদেশিক অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়নি। তবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী দেশগুলো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিয়েছে। অনুদানের তুলনায় বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ এখন বেশি; যা উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে বিশ্বে মোট ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশ রয়েছে। তারা সবাই বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ক্রমান্বয়ে সাহায্যের পরিমাণ ও গুণগত দিক দুটোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেখা যচ্ছে সাহায্যের পরিমাণ কমছে এবং কার্যকরী ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের ইতিহাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার- এই দুটো দেশই ২০১৮ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডের সবগুলোতেই নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে মূলধন বিন্যাসে প্রথম চারটি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৮ এপ্রিল খুলে দেয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস চলবে শনিবারও মিরসরাইয়ে জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে লুট, মূল হোতা গ্রেফতার বৃষ্টি কামনায় ঈশ্বরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইসতিসকার নামাজ আদায় কুবিতে আল্টিমেটামের পর ভিসির কার্যালয়ে তালা ঝুলাল শিক্ষক সমিতি সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ শ্রমিক নিহতের খবরে ঈশ্বরগঞ্জে শোক দুর্যোগে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু কেন বাংলাদেশে? জবিতে ভর্তি পরীক্ষায় আসন বেড়েছে ৫০টি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : ওবায়দুল কাদের মাটির নিচে পাওয়া গ্রেনেড মাইন মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে জবি, বন্ধ থাকবে পরীক্ষা কুড়িগ্রামে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ

সকল