১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক কেজি পেঁয়াজে লাখ টাকার হাসি

পেঁয়াজ কেনার জন্য শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন শিমু আক্তার - ছবি : নয়া দিগন্ত

কোলে তার দেড় বছরের শিশুপুত্র। অন্য হাতে এক কেজি পেঁয়াজের ছোট একটি পলিথিনের পোটলা। অথচ চোখে মুখে যেন বিশ্বজয়ের হাসি। কারণ দীর্ঘ দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন শিমু। যদিও ৪৫ টাকায় টিসিবি’র এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে এই গৃহিণীকে।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের পূর্বপাশের সচিবালয় লাগোয়া রাস্তায় টিসিবি’র নির্ধারিত ট্রাক থেকে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে শত শত নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পল্টন প্রেসক্লাবের সামনের প্রধান রাস্তা থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা নারী-পুরুষের পৃথক দুটি লাইন দক্ষিণে বিদ্যুৎ ভবন পার হয়ে আব্দুল গনি রোডও ছাড়িয়েছে। সকাল থেকে শুরু হওয়া দীর্ঘ এই লাইন দুপুর ১২টায়ও যেন শেষ হচ্ছে না। বরং ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে।

পেঁয়াজ কেনার জন্য শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন শিমু আক্তার। সকালের দিকে প্রথমে একেকজনকে দুই কেজি পেঁয়াজ দেয়া হলেও লোকজনের চাপ বাড়তে থাকায় পরে দুই কেজি থেকে কমিয়ে প্রতিজনকে এক কেজি করে পেঁয়াজ দেয়া হয়। তবুও লোকজনকে সামাল দেয়া কষ্ট হচ্ছিল টিসিবি’র তিন বিক্রয়কর্মীর।

ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রির কাজে দেখা গেল টিসিবি’র বিক্রয়কর্মী ইকবাল পাল্লায় এক কেজি করে পেঁয়াজ ওজন করছেন, পলাশ টাকা নিচ্ছেন আর নুরুজ্জামান পেঁয়াজ প্যাকেটে করে এগিয়ে দিচ্ছেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪৫ টাকা নির্ধারিত থাকলেও অনেকে ভিড়ের এবং ভাংতি না থাকার কারণে ৫০ টাকা দিয়েই পেঁয়াজ নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার যারা ৪৫ টাকা ভাংতি নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারা ন্যায্যমূল্যেই পেঁয়াজ কিনছেন।

লাইনের আগে পিছে দাঁড়ানো নিয়ে মাঝেমধ্যেই পরস্পরের মধ্যে বাহাসও হচ্ছে। পেঁয়াজ কিনতে আসা নারী এবং পুরুষদের দুটি পৃথক লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। নারীদের তুলনায় পুরুষদের লাইনটি বেশি দীর্ঘ।

শিমু আক্তার নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, সকালে বাসায় নাস্তা তৈরি না করেই ছেলেকে নিয়ে এখানে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। রোদের তাপে শিমুর কোলের ছোট্ট শিশুর চোখ মুখ  লাল হয়ে গেছে। তারপরেও পেঁয়াজ কিনে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।

পরিবার নিয়ে সেগুনবাগিচায় থাকেন শিমু। স্বামী কম বেতনের ছোট একটি চাকুরী করেন। টানাটানির সংসারে কম দামে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পেরেই মহাখুশি তিনি।

সকাল থেকেই টিসিবি তাদের নির্ধারিত ট্রাকে করে (ট্রাক নং ঢাকা মেট্টো ন- ১৪-৯৫৯৬) এখানে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। বিক্রয়কর্মীরা জানান, আজকের জন্য তাদের মজুদ এক হাজার কেজি পেঁয়াজ। সকাল থেকে প্রতিজনকে দুই কেজি পেঁয়াজ দেয়া হয়েছে। তবে লোকজনের চাপ এবং চাহিদা বেশি হওয়ায় সকাল ১১টার পর থেকে প্রতিজনকে দুই কেজির পরিবর্তে এক কেজি করে পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে। আজকের নির্ধারিত এক হাজার কেজি পেয়াজ বিক্রি শেষ হলে আজকের মতো বিক্রি বন্ধ থাকবে। আগামীকাল আবার বিক্রি করা হবে।

টিসিবি’র পেঁয়াজ কিনতে আসা লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল তাদের বেশিরভাগের বাসা সেগুন বাগিচা, তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন ও চানখারপুল এলাকায়। বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে টিসিবি’র পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতেই তারা এখানে এসে সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement