১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফ্ল্যাট কেনার ঋণসীমা হচ্ছে ২ কোটি টাকা

- প্রতীকী ছবি

দীর্ঘ দিন ধরে আবাসন খাতে দুরবস্থা চলছে। আবাসিকে গ্যাসসংযোগ বন্ধ, নির্মাণশিল্পের কাঁচামাল রড, সিমেন্টের দাম বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে ফ্ল্যাটের নির্মাণব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু বাড়তি দামে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণের ফ্ল্যাট কেনা সহজসাধ্য করতে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চসীমা বাড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক এমডিদের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে ফ্ল্যাট কিনতে ব্যাংক একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ ঋণ দিতে পারত এক কোটি ২০ লাখ টাকা। এখন এমডিদের অনুরোধে তা বাড়িয়ে দুই কোটি টাকা করা হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে ওই সূত্র জানায়।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রথম সহসভাপতি মো: লিয়াকত আলী ভূঁইয়া গতকাল শনিবার নয়া দিগন্তকে জানান, আবাসন খাতের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। এখনো ১০ হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রীত রয়েছে। এ অবস্থায় ফ্ল্যাট কেনার ঋণসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আবাসন খাতের দুর্দিনে অনেকটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে ব্যবসাবাণিজ্যে মন্দার প্রভাব সব খাতে পড়েছে। বেশির ভাগ ব্যবসার অবস্থাই ভালো না। এ কারণে চলমান ব্যবসা চালু রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। নতুন কারখানার চিন্তাই অনেকে করতে পারছেন না। ফলে সামগ্রিক আর্থিক লেনদেন কমে গেছে ব্যাংকিং খাতে। বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহও তাই তলানিতে নেমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে অন্য খাতের মতো ব্যাংকাররাও পড়েছেন মহাবিপাকে।

ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার তাই ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের সাথে অনির্ধারিত বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তারা কথা বলেন গভর্নরের সাথে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবিবির এমন একজন সদস্য ও দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, বৈঠকে ব্যাংকিং খাতের বাইরেও অন্যান্য খাত নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে আবাসন খাতের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়।

ওই এমডি জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতের খাতভিত্তিক খেলাপি ঋণের অন্যতম হলো আবাসন খাত। এ খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেশির ভাগই ফেরত দিতে পারছেন না। ফলে খাতভিত্তিক খেলাপি ঋণে আবাসন এখন বড় খাত হিসেবে উঠে এসেছে। ওই এমডির মতে, সম্ভাবনাময় সবচেয়ে শ্রমঘন আবাসন খাতের এ দুরবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসছে। দীর্ঘ দিন ধরে আবাসন খাতে নতুন গ্যাসসংযোগ বন্ধ রয়েছে। প্রথম কয়েক বছর ফ্ল্যাট তৈরি করে শুধু নতুন গ্যাসসংযোগের অপেক্ষায় থাকেন অনেক উদ্যোক্তা। গ্যাসসংযোগ বন্ধ থাকায় নতুন ফ্ল্যাট বিক্রি অস্বাভাবিকহারে কমে যায়। এর ওপর আবাসন শিল্পের কাঁচামাল সিমেন্ট, রডসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যায়। বেড়ে যায় শ্রমিকের মজুরি। নানামুখী ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে এ খাতে। ফলে আবাসন খাতে ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যায়।
এ দিকে, আবাসন খাতে নির্মাণব্যয় বাড়লেও মানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। এক দিকে নির্মাণব্যয় বৃদ্ধি, অন্য দিকে আয় তুলনামূলক না

বাড়ায় অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শতভাগ রেডি ফ্ল্যাট বিক্রি কমে যাওয়ায় যারা ব্যাংকঋণ নিয়ে এ ব্যবসা করছেন তাদের পক্ষে ব্যাংকঋণের কিস্তি দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে আবাসন খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। বেকায়দায় পড়ে গেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। অনেকেই একাধিক বাড়ির নির্মাণকাজ করার চুক্তি করেছেন। ব্যাংকঋণ ও নিজস্ব উদ্যোগে অর্ধেক কাজ শেষ করতে পেরেছেন। কিন্তু ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পারায় তাদের পক্ষে বাকি কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকল্প ফেলেই ব্যাংকের পরোয়ানা মাথায় নিয়ে অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। এতে ব্যাংকগুলো পড়েছে বিপাকে। ঋণ আদায় করতে না পেরে একপর্যায়ে ওই ঋণ খেলাপি করা হচ্ছে। আর খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে ব্যাংকের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে।

পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর পক্ষে ঋণসীমা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলে একজন গ্রাহক সহজেই একটি ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের এমডিরা নানা প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু ওই প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগই বিবেচনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তবে ফ্ল্যাট কেনার ঋণসীমা বাড়ানোর প্রস্তাবে নিশ্চিত সাড়া দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই একটি সার্কুলার জারি করবে বলে ওই সূত্র নিশ্চিত করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement