২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ব্যাংক থেকে তিন মাসে পুরো বছরের ৬১ শতাংশ ঋণ নিয়েছে সরকার

রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা ও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধসই কারণ
-

অর্থবছরের তিন মাসেই পুরো অর্থবছরের জন্য প্রক্ষেপিত ব্যাংক ঋণের ৬১ শতাংশ নিয়ে ফেলেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। অন্য দিকে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে (তিন মাসে) সরকার এ খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ২৮ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। মূলত রাজস্ব আদায়ে হতাশাজনক পরিস্থিতি এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় সরকারকে অনেকটা বাধ্য হয়েই এখন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। আর এই ঋণ গ্রহণের ফলে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে সে ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অস্বাভাবিক হারে কেন বাড়ছে সরকারের ব্যাংক ঋণ। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারা বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়লে সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার তেমন কোনো প্রয়োজন পড়ত না। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জুলাই-আগস্ট মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কিন্তু আদায় সম্ভব হয়েছে ২৯ হাজার ৬২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। দুই মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্য দিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কিন্তু বাজেটে এই রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ধরা রয়েছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

একইভাবে ক্রয়ের ক্ষেত্রে অত্যাধিক কড়াকড়ি আরোপ এবং কর বৃদ্ধির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষ। এ জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রিও কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) তিন হাজার ৩৬৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ের তিন ভাগের এক ভাগ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে প্রাপ্ত হিসাবে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ১১ হাজার ৩০৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে সাত হাজার ৬৪৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ হিসাবে এই দুই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার মূলত দুইভাবে ঋণ নিয়ে থাকে। একটি হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এবং অন্যটি হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। যেহেতু সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। তাই সরকার বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে অধিকহারে ঋণ নিচ্ছে। যদি রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব না হয় তবে বছর শেষে বাজেটে প্রক্ষেপিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ সরকারকে ব্যাংক থেকে নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকার দেশের ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ঋণ নিয়েছে ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এর পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছে ১৮ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকার ঋণ নিয়েছে ৩২৯ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঋণ নিয়েছে সাত হাজার ৯৫০ কোটি টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঋণ নিয়েছে ২৪ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement