১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পোশাক রফতানি কমছে, বন্ধ হচ্ছে কারখানা

পোশাক রফতানি কমছে, বন্ধ হচ্ছে কারখানা - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি কমছে৷ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট আকারের কারখানা৷ কাজ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা৷ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, চাহিদা কমা এবং পোশাকের দাম না বাড়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি তার আগের তিন মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৭২ ভাগ কমেছে৷ যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে পাঁচ দশমিক ১৬ ভাগ৷

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী এই বছরের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত প্রবৃদ্ধি ধারা অব্যাহত ছিল৷ কিন্তু আগস্ট-সেপ্টেম্বরে তা আর ধরে রাখা যায়নি৷ গত বছরের তুলনায় আগস্টে রপ্তানি কমেছে ১২ ভাগ আর সেপ্টেম্বরে কমেছে পাঁচ ভাগ৷

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২০ কোটি ডলার৷ যা গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৯১ ভাগ বেশি৷ এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখন সংশয় দেখা দিয়েছে৷

দেশের মোট রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৩ ভাগ আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৪ ভাগই যোগান দিয়েছে এই খাত৷

বর্তমানে পোশাক রফতানিতে বিশ্বে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান৷ এই বাজারের শতকরা ৬ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশের কারখানাগুলো৷ কিন্তু এই অবস্থান ধরে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে৷ তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামসহ অন্যদের সাথে বাংলাদেশকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷

বাংলাদেশের কারাখানাগুলো ক্রমশ কার্যাদেশ হারাচ্ছে বলে দাবি করে আসছেন মালিকরা৷ তবে এর পরিমান কেমন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিজিএমইএ'র একজন কর্মকর্তা জানান, ‘‘আমরা মালিকদের কাছ থেকে অর্ডার হারানোর কথা শুনি৷ তবে কতজন মালিক কী পরিমান অর্ডার হারিয়েছেন সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই৷''

বিজিএমইএর পরিচালক রেজওয়ান সেলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যে অর্ডার হারাচ্ছি তা সত্য৷ মিয়ানমার গত বছর ১০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে৷ তার আগের বছর রফতানি করেছে চার বিলিয়ন ডলারের৷ এই ব্যবসা বাংলাদেশ থেকেই গিয়েছে৷ এখন পাকিস্তানের ব্যবসা বাড়ছে৷ আমাদের অবস্থা ভালো না৷''

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, ‘‘গত জানুয়ারিতে শ্রমিকদের যে বেতন বেড়েছে তার সঙ্গে ছোট কারখানা তাল মিলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে৷ কিছু বড় কারখানাও লে অফে বাধ্য হয়েছে৷ এর সাথে বাজার মন্দা, পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়া, দাম কমে যাওয়া অন্যতম কারণ৷ টাকার সাথে ডলারের অবমূল্যায়নও ঠিক মতো হচ্ছে না৷ পাকিস্তান, ভারত, চীনসহ আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক দেশে যেভাবে কারেন্সি ডলারের বিপরীতে অবমূল্যায়ন করেছে আমাদের সেরকম হয়নি৷ ফলে আমাদের তুলনায় তাদের পোশাক সস্তা হচ্ছে৷''

বিজিএমই-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ৫০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যেগুলো মূলত ছোটো আকারের৷ এসব কারখানায় গড়ে পাঁচ শ' থেকে ছয় শ' শ্রমিক কাজ করতেন৷ সেই হিসেবে কমপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন গেল ছয় মাসে৷

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডরেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘‘যেসব পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে সেগুলো ছোট৷ এইসব ছোট ছোট কারখানার বেশ কিছু আছে যারা বড় কারখানার সাথে একীভূত হয়েছে, আবার নতুন বড় কারখানাও গড়ে উঠছে৷ তাই বাস্তবে পরিস্থিতি অতটা খারাপ না৷ ২৫ হাজার শ্রমিক আসলে বেকার নেই৷ তাদের বড় একটি অংশ একীভূত হয়ে যাওয়া কারখানায় কাজ পাচ্ছে৷ কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘পোশাক শিল্পের মালিকরা এই পরিস্থিতির জন্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াকে বড় কারণ হিসেবে সামনে আনছেন৷ শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো নিয়ে কথা বলছেন৷ আসলে এটা ঠিক নয়৷ কেউ কেউ তাদের ব্যবস্থাপনা ত্রুটির জন্য মার্কেট হারাচ্ছে৷ ক্রেতাদের চাহিদা অনুয়ায়ি তারা কারখানা আপগ্রেড না করায়ও বন্ধ হয়ে গেছে৷''

রানা প্লাজা ধ্বসের পর ২০১৩ সালে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামের দুইটি জোট গঠন করে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও রিটেইলার প্রতিষ্ঠানগুলো৷ বাংলাদেশ সরকার ও কারখানা মালিকদের সাথে তারা পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি করে৷ নেয়া হয় কারখানাগুলোর সংস্কার উদ্যোগ৷ যেসব কারখানা সময়মত সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে জোটের সদস্যগুলো৷ ঐ কারখানাগুলো ক্রয় আদেশ না পাওয়ায় কার্যক্রম বন্ধ করে দিতেও বাধ্য হয়েছে৷

বাংলাদেশে ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে পোশাক কারখানার সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৮৭৬টি, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬২১টিতে৷ চার বছরে মোট বন্ধ হয়েছে এক হাজার ২৫৫ টি৷ বিজিএমই'র তথ্য মতে, চার বছরে পোশাক খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৮ শতাংশের মত৷ অন্যদিকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের দাম কমেছে গড়ে ৭ শতাংশ৷ পোশাকের চাহিদাও কমেছে আট শতাংশ৷ যার প্রভাব পড়েছে শিল্পে৷

বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন, যার অধিকাংশই নারী৷ তবে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির কারণে শ্রমিকের চাহিদাও দিন দিন কমছে৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আইসিসি! ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইসফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’

সকল