২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পেঁয়াজ নিয়ে ধূম্রজাল দাম ৮০ টাকাই

পেঁয়াজ
পেঁয়াজ - ছবি : সংগৃহীত

পেঁয়াজের দাম নিয়ে সারা দেশে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। দাম নিয়ে সরকারের ঘোষণার সাথে বাস্তব অবস্থার কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। খোলাবাজারে কম দামে যে সামান্য পরিসরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সেটি বাজারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। সরকারের পক্ষ থেকে ২০ ঘণ্টার মধ্যে দাম কমে আসবে বলে ঘোষণা দেয়া হলেও বাজারে এখনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিদরে। এই সুযোগে বাড়তি মুনাফা করে যাচ্ছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। আবার ঝামেলা এড়াতে অনেকে পেঁয়াজ বিক্রি করা বন্ধই করে দিয়েছেন। এতে গ্রহকদের ভোগান্তি আরো বেড়েছে।

ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির ক্ষেত্রে দাম প্রায় তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে গতকাল বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজার ও মানভেদে দেশী পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিদরে। গত শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে যে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকা ছিল, গত রোববার তা এক লাফে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা হয়ে যায়। একই দাম গতকালও অব্যাহত ছিল। পাইকারি বাজারে গতকাল দেশী পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৬ থেকে ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়। মঙ্গলবারের ধারাবাহিকতায় গতকালও স্বল্পপরিসরে রাজধানীর খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত রাখে টিসিবি। রাজধানীর পাঁচটি স্পটে চলছে এ কার্যক্রম। এখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন।

বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দাম নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে সরকারি বিভিন্ন দফতর, পেঁয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্য সচিব ড. মো: জাফর উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি ঘোষণা দেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসা এবং খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করা হলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে কমেনি পেঁয়াজের দাম।

এর আগে গত শুক্রবার ভারত সরকার সেদেশ থেকে পেঁয়াজ রফতানির ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ দর তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পেঁয়াজের সর্বনি¤œ রফতানিমূল্য টনপ্রতি ৮৫২ ডলার নির্ধারণ করে দেয় ভারতের কাঁচা পণ্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ন্যাপিড। দেশটির বাজারে দাম বাড়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের রফতানি নিরুৎসাহিত করতে ভারত এ কাজ করেছে বলে জানান এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে দেশে পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যায়। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, আগে টনপ্রতি পেঁয়াজ ২৫০ থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি হলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৮৫২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্ধিত মূল্য সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে ভারতীয় রফতানিকারকদের পাশপাশি হিলি কাস্টমসে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। শনিবার থেকেই নতুন দামে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে বলে জানান হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা।

ভারতীয় সূত্র জানায়, ভারতের যেসব এলাকায় অনেক বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়ে থাকে এ রকম বেশকিছু এলাকা এবার বন্যা হয়েছে। এতে পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে সরবরাহ কমেছে এবং আমাদের বাজারেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কলকাতার বাজারেই বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজ রফতানিকে নিরুৎসাহিত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে এর ন্যূনতম রফতানিমূল্য ৮৫২ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে ন্যাপিড।
রামপুরা বাজারের ক্রেতা সোলায়মান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ভারত পেঁয়াজের দাম এখন বাড়িয়েছে। কিন্তু বাজারে যে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে সে পেঁয়াজ তো আগেই আমদানি করা। তাহলে এই পেঁয়াজের দাম কেন বাড়বে? তা ছাড়া ভারত সরকার তো দেশী পেঁয়াজের দাম বাড়ায়নি। যারা মুনাফার লোভে পেঁয়াজের দাম এক লাফে দ্বিগুণ করে ফেলেছেন। সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। তাহলে দেখবেন ভবিষ্যতে এমন ঘটনা হরহামেশা ঘটবে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, প্রায় বিভিন্ন পণ্যের দাম হুটহাট বেড়ে যায়, এর বিরুদ্ধে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয় না।

এ দিকে পেঁয়াজের বাড়তি দাম সহসা খুব একটা কমবে না আশঙ্কা করে খিলগাঁও বাজারের দোকানি মুখলেছুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ভালো মানের বাছাই করা দেশী পেঁয়াজ গত শুক্রবার ৫৫ টাকা বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করছি ৮০ টাকায়। এর পরও বিক্রি কমেনি। আসলে পেঁয়াজের বাড়তি দাম মানুষের সয়ে গেছে। দাম যত হোক মানুষ পেঁয়াজ কিনবেই। গত বছর পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা হলেও বিক্রি থেমে ছিল না। বরং দাম আরো বাড়তে পারে এমন শঙ্কায় মানুষ আরো বেশি কেনে। তবে এবারের ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে, এ বছর পেঁয়াজের দাম আর কমবে না। তবে সরকার কঠোর হলে কয়েক দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement