১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাঁচা চামড়া রফতানি নিয়ে রশি টানাটানি

কাঁচা চামড়া রফতানি নিয়ে রশি টানাটানি - ছবি : সংগৃহীত

বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তে এখনো অটল রয়েছে। দেশের চামড়া ও দেশীয় শিল্পের বিকাশের স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কাঁচা চামড়ার সর্বনি¤œ মূল্যের নজির স্থাপনেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত। দীর্ঘ কয়েক দশক এই রফতানি বন্ধ ছিল। সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিভিন্ন মহল ও দেশের সাধারণ মানুষ সাধুবাদ জানালেও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বিরোধিতা করছে। চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত থেকে সরকার যেন সরে আসে সে জন্য ব্যবসায়ীরা নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিভিন্ন এতিমখানা, সুশীলসমাজ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের সঠিক পরিকল্পনার অভাবের কারণেই আজ দেশে চামড়ার বাজারের এই অবস্থা। সরকার সঠিকভাবে এস্টিমেট করেনি। শুধু একটা নির্দেশনা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তবে আগামী ১৭ আগস্ট থেকে ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত দরেই মাঠ পর্যায় থেকে চামড়া কিনবে বলে জানান বিটিএ সাধারণ সম্পাদক মো: সাখাওয়াত উল্লাহ।

এ দিকে গত ১৩ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সাথে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া বেচাকেনা নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। পরদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্যানারি মালিকদের সাথে আলোচনা করে ২০ আগস্টের মধ্যে চামড়া কেনার অনুরোধ জানালে ট্যানারি মালিকরা সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত নেন। তবে হঠাৎ করে সরকারের নেয়া এ সিদ্ধান্তে এই শিল্প খাতের কোনো উপকার হবে না বলে মনে করেন মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন আড়তদাররা। কারণ যা ক্ষতি হওয়ার গত কয়েক দিনেই হয়ে গেছে। তারা বলেন, ২০১৪ সাল থেকেই ক্রমে মূল্যপতনের এই দশা। সরকার যদি তখন থেকেই কঠোরভাবে কোনো পদক্ষেপ নিতো, তাহলে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। 

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঢাকাসহ সারা দেশে এবার সরকার নির্ধারিত মূল্যে পশুর চামড়া কোনো মওসুমি ব্যবসায়ী কিনেননি। তারা নামমাত্র মূল্য ধরিয়ে দিয়েছে পশু কোরবানিকারীদের। আর এই দর নিয়ে অনেক জায়গাতেই কথাকাটাকাটি হয়েছে। দাম কম থাকায় বিভিন্ন দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ দানকৃত চামড়া নিতেও চায়নি। ফলে প্রকৃত দাম না পাওয়াতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া ফেলে দেয়া হয়েছে। এই কোরবানির ঈদের মওসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ আসে। আমাদের স্থানীয় বাজারে চামড়ার ব্যবহার বাড়ছে। যার কারণে এখন দেশেই প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ স্থানীয় চামড়ার ব্যবহার হচ্ছে। গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প। দেশের চামড়া ব্যবসায় ঢাকার পোস্তার পরেই নাটোরের অবস্থান। দেশে সারা বছর যে চামড়া আসে তার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সংগ্রহ হয় শুধু কোরবানির ঈদ থেকে। কোরবানির ঈদ থেকে প্রতি বছর ৬০ লাখ পিস চামড়া পাওয়া যায়। সারা দেশে মোট ট্যানারির সংখ্যা হলো ২১০টি। তবে চামড়াজাতপণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হলো পাঁচ শতাধিক। এই ঈদের কোরবানিকৃত প্রাণীর চামড়ার জোগান বার্ষিক মোট জোগানের ৫০ শতাংশের বেশি। আর এর মধ্যে গরুর চামড়ার পরিমাণ ৪৫ থেকে ৫০ লাখ পিস, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার চামড়ার পরিমাণ ৩০ থেকে ৩৫ লাখ পিস।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মফিজুল ইসলামের সাথে আলাপকালে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা এখনো চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি। এই মুহূর্তে চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাহার করব না। তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের রফতানিমুখী শিল্প উন্নত ও বিকাশিত হোক। আর সে জন্য আমরা ওয়েড ব্ল চামড়া আগে রফতানির অনুমতি দেবো। তারপর পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত দেবো।
সচিব জানান, আমরা আগেই বলেছি তাদেরকে নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া কিনতে। ঈদের আগেও ব্যবসায়ীরা রাজি হয়েছিল। আর এটা আমি বলেছিলাম বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে। আশা করেছিলাম তারা সেটা পালন করবে। কিন্তু তারা আজ কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করছে। লবণ দিয়ে এই চামড়া তিন মাস রাখা যেত। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, ট্যানার্স এসোসিয়েশন বলছে তারা ২০ তারিখের মধ্যে চামড়া কিনবে। আমরা বলেছিলাম আগেই কিনতে। যদি তারা নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করত তাহলে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতাম না। তিনি বলেন, এই চামড়ার প্রকৃত মূল্য পাওয়ার হকদার হলো এতিমখানা, মাদরাসা, এতিম ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী। তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখানে শিল্প মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের অধীনেই সব শিল্পকারখানা। তিনি বলেন, আমরা দেখবো ব্যবসায়ীরা কী করে। তারপর আমাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পদক মো: সাখাওয়াত উল্লাহ গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে জানান, তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০ আগস্ট থেকে চামড়া কিনতে শুরু করবেন। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়া নষ্ট হওয়ার আগেই তাদেরকে চামড়া কেনার জন্য বলেছে। বাণিজ্য সচিবের সাথে বিটিএ সভাপতির কথা হয়। সেখানে তারা সচিবকে জানিয়েছেন আগামী ১৭ আগস্ট থেকে চামড়া কেনা শুরু করবেন। তারা সরকার নির্ধারিত দরেই এই চামড়া কিনতে সম্মত হয়েছেন। চেষ্টা করা হয়েছিল এই রফতানির আদেশকে প্রত্যাহারের ব্যাপারে। তবে বুধবার একদিন খোলা থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। 
বিটিএ নেতা জানান, গুণগত মানসম্পন্ন চামড়াগুলো আমরা সরকার বেঁধে দেয়া দামে কিনব। কিন্তু যেসব চামড়া মানসম্পন্ন নয় সেগুলোর দাম কম হবে। তিনি বলেন, আড়তদাররা তাদের কাছে যে টাকা পায় এটা সত্য। ব্যবসা যেহেতু করি তাই লেনদেন থাকতেই পারে। আমরা টাকা মেরে চলে যাচ্ছি না। তাদের সাথে আমাদের ৩০-৪০ বছরের এই ব্যবসা। 

অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, সরকারের সঠিক পরিকল্পনার অভাব ছিল। তাদের উচিত ছিল এটা এস্টিমেট করা। কী পরিমাণ চামড়া আছে। কী পরিমাণ কোরবানি হতে পারে। তা থেকে এবার কোরবানিতে কতটা চামড়া আসতে পারে। সেগুলো এস্টিমেট করে ট্যানারি ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে একটা ব্যবস্থা নির্ধারণ করা। একটা নির্দেশনা দিয়েই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তিনি বলেন, সরকার রফতানির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সাথে আমি একমত হতে পারছি না। হয়তো এই রফতানি থেকে কিছুটা বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়তে পারে। 

চামড়ার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ড. আজিজ বলেন, মাঠ পর্যায়ে যারা কোরবানি দিয়েছে তাদের প্রসেস করার সুযোগ নেই এখন। কারণ তারা তো বিক্রি করেই দিয়েছে। স্থানীয় বাজারে দাম বাড়লে ট্যানারি মালিকরাই এখন লাভবান হবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
শিবপুরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর নিহত চকরিয়ায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩ গাজা মানবিক নরকে পরিণত হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান রাফা হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের ত্যাগ করা উচিত : চীন গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি

সকল