২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাঘব বোয়ালদের নাম নেই রূপালীর হালনাগাদ খেলাপি তালিকায়

রাঘব বোয়ালদের নাম নেই রূপালীর হালনাগাদ খেলাপি তালিকায় - সংগৃহীত

রূপালী ব্যাংকের ১৫৯ জন ঋণখেলাপির কাছে পাওনা চার হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এ হিসাব গত মার্চ মাসের। তবে এর তিন মাস আগে অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে মাত্র ২০ জনের কাছেই খেলাপি ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা, যা তিন মাস পরে তাদের বেশির ভাগেরই নাম ১৫৯ জনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আর অপর ২০টি কোম্পানির কাছে পাওনা রয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। যার বেশির ভাগই গত ডিসেম্বরে কোনো রকম ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই পরিশোধ দেখিয়েছিল। ফলে তাদের ঋণ ডিসেম্বর ভিত্তিক খেলাপি ঋণের হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর মধ্যে দেশের আলোচিত তিনটি কোম্পানির কাছেই রয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, উচ্চ আদালত থেকে এক কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপিদের তথ্য চাওয়া হয় ব্যাংকগুলোর কাছে। এক কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ আছে রূপালী ব্যাংক এমন ১৫৯ জনের নামের তালিকা তৈরি করে। এ তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরবরাহকৃত রূপালী ব্যাংকের তালিকা থেকে দেখা যায়, রাঘব বোয়াল ঋণখেলাপিদের নাম নেই ওই তালিকায়। এর মধ্যে ২০টি শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান ছিল, যাদের কাছে রূপালী ব্যাংকের পাওনা ছিল আট হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি ১৭টি কোম্পানিকে অশ্রেণীকৃত (আন ক্লাসিফাইড) দেখানো হয়েছে। ১৭টির মধ্যে বহুল আলোচিত তিনটি গ্রুপের কাছেই খেলাপি ঋণ ছিল তিন হাজার কোটি টাকা।

আবার রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে ২০ শীর্ষ ঋণখেলাপির কাছে পাওনা ছিল দুই হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। সব কোম্পানির ঋণ ছিল আদায় অযোগ্য বা মন্দমানের। কিন্তু উচ্চ আদালতে সরবরাহ করা খেলাপি ঋণের ১৫৯ জনের তালিকায় শীর্ষ ২০ জনের বেশির ভাগেরই নাম নেই। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আতাউর রহমান প্রধান গতকাল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কোনো কোম্পানি খেলাপি না হলে ঋণখেলাপির তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। ডিসেম্বরে যাদের নাম শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় ছিল তারা পুনঃতফসিল করায় মার্চ মাসে তাদের ঋণ নিয়মিত হয়ে গেছে। ফলে তাদের নাম ১৫৯ জনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

রূপালী ব্যাংকের ডিসেম্বর ভিত্তিক আর্থিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির মধ্যে শীর্ষে ছিল নূরজাহান গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা ছিল প্রায় ৬৩০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে বেনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ২০৯ কোটি টাকা। এর পরে ইব্রাহিম কনসোর্টিয়ামের কাছে ১৯২ কোটি টাকা, এ এইচ জেড অ্যাগ্রোইন্ড্রাস্টিজের কাছে ১৬৪ কোটি টাকা, হিমালয় পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের কাছে প্রায় ১৬৬ কোটি টাকা, এস এ গ্রুপের কাছে ১৫১ কোটি টাকা, ক্রিস্টাল স্টিলের কাছে ১০৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

এক সময় মাদার টেক্সটাইল ছিল রূপালী ব্যাংকের বড় ঋণখেলাপি। ডিসেম্বর শেষে কোম্পাটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা রয়েছে এক হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। কিন্তু ডিসেম্বরের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকায় মাদার টেক্সটাইলের নাম নেই। নাম নেই আরো অনেক রাঘব বোয়ালের। অর্থাৎ ব্যাংকটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে মাদার টেক্সটাইলকে নিয়মিত দেখানো হয়েছে। 

উচ্চ আদালতে সরবরাহ করা মার্চে শেষ পরিসংখ্যান দিয়ে তৈরি রূপালী ব্যাংকের এক কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপির তালিকায় চট্টগ্রামভিত্তিক কোম্পানি মাররিন ভেজিটেবল অয়েলের কাছে ব্যাংকটির পাওনা রয়েছে ২৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার ঋণখেলাপি এ প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ আদালত থেকে স্থাগিতাদেশ নেয়া হয়েছে। যার মেয়াদ আগামী ১৫ জুলাই শেষ হচ্ছে। একই শাখার জাসমির ভেজেটেবল অয়েলের কাছে পাওনা রয়েছে ২৩৩ কোটি টাকা। লোকাল অফিস শাখার ঋণখেলাপি বেনটেক্স ইন্ড্রাস্ট্রির কাছে পাওনা রয়েছে ২১১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গুলশান শাখার ঋণখেলাপি ইব্রাহিম কনসোর্টিয়ামের কাছে পাওনা ১৯২ কোটি টাকা। একই শাখায় এ এইচ জেড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে পাওনা ১৬৮ কোটি টাকা। হিমালয়া পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের কাছে ১৬৫ কোটি টাকা, মেসার্স শফিকের কাছে ১২১ কোটি টাকা, মারিয়া শিপ ব্রেকিংয়ের কাছে ১১৫ কোটি টাকা, ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকার্সের কাছে ১০৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement