২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১০ বছরের মধ্যে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন সবচেয়ে চাপে : সিপিডি

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য - ফাইল ছবি

বাংলাদেশে গত ১০ বছরের মধ্যে এখনই সামষ্টিক অর্থনীতি সবচেয়ে চাপে রয়েছে বলে দাবি করেছে গবেষণা সংস্থা সিপিডি। সংস্থাটি বলেছে, তা রক্ষা করাই আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। মঙ্গলবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলা হয়। বাজেট ঘোষণার আগে ঠিক দু’দিন আগে সিপিডি বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে জোর দিতে সরকারকে সুপারিশ করেছে। এগুলো হল রাজস্ব আহরণ, ব্যাংক খাত সংস্কার এবং টাকার বিনিময় হারকে নমনীয় করা।

আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের বর্তমান সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সিপিডি বলেছিল, তা ছিল ‘উৎসাহহীন, উদ্যোগহীন, উচ্ছ্বাসহীন এবং উদ্যমহীন’।

বাজেটের চালেঞ্জ নিয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতিতে চিড় ধরছে, এটি রক্ষা করা বড় চ্যালেঞ্জ। ‘এর ভেতরে তিনটি বিষয়কে জোর দিয়ে নিয়ে এসেছি। একটি হল রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকিং খাতে সংস্কার এবং টাকার বিনিময় হারকে নমনীয় করে নিচের দিকে ঠিক করে নিয়ে আসা।আর সামাজিক খাতের ব্যয়ের বিষয়টি তো রয়েছেই।’ আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরের শাসনকালে অর্থনীতিতে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা এখন ‘সীমান্ত রেখায় উপনীত’বলেও মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয়।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশের ব্যক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ও সামাজিক ক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না। প্রবৃদ্ধির ধারার সাথে অন্যান্য উন্নয়নের সূচকগুলোর একটি বৈসাদৃশ্য আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত ১০ বছরে যে কোনো সময়ের চেয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি এখন চাপের মুখে আছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা অর্থনীতির একটি শক্তি ছিল। সেই শক্তিতে চিড় ধরছে, সেই শক্তিতে দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এটি অতিক্রম না করা গেলে উন্নয়নের জন্য যে অভিলাষ সেখানে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করার সুযোগ কম হবে। এবং অন্য উৎস থেকে যদি বিনিয়োগ করার চেষ্টা করি, তাহলে এই সামষ্টিক অর্থনীতি আরও খারাপ হওয়ার সুযোগ আছে।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আশাপ্রদ হলেও বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের বলে মনে করছে সিপিডি।

দেবপ্রিয় বলেন, এর ফলে আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ দ্রুততার সাথে নেমে আসছে। সরকার যেটা করছে ডলার বিক্রি করে টাকা কে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। টাকাকে নিচে নামিয়ে আনতে হবে, প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে চালু রাখতে হবে। ৩ শতাংশের বেশি উচ্চ রয়ে গেছে।

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, সরকার মনে করে, টাকাকে সস্তা করলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে। আমরা মনে করি, মূল্যস্ফীতি এখন যে অবস্থায় আছে, তা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে, এ সময় টাকাকে অবনমন করা হলে তা সহ্য করার শক্তি অর্থনীতিতে আছে। ব্যাংক খাতে নিয়ে আগের মতোই সরকারের সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমান সরকার আসার পর যে কয়টি পদক্ষেপ নিয়েছে, প্রতিটি পদক্ষেপ ব্যাংকিং খাতের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকারক হয়েছে। খেলাপি ঋণ ১ টাকাও বাড়বে না বলে ঘোষণার পর তার বদলে ১৭ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সুদের হার নিয়ে নাড়াচাড়া করে ব্যাংকিং খাতের সমাধান হবে না। সুদ সুবিধা দিলে কোটি কোটি টাকা ব্যাংকে দিয়ে যাবে, এটা ভুল তত্ত্ব। কাঠামোগতভাবে যদি সুশাসনের ব্যবস্থা না আনা যায়, যদি প্রকৃত তসরুফকারীদের শাস্তি না দেয়া যায়, ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট দেখা দেবে। অর্থনৈতিক নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা ছিল, তা সাম্প্রতিককালে ‘দুর্বল’হয়ে গেছে বলেও মনে করছে সিপিডি।

কালো টাকা সাদা করার নতুন সুযোগ দেয়া হলে তা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না বলেও মন্তব্য করেন দেবপ্রিয়।

তিনি বলেণ, এ বছর ধানের দাম নিয়ে বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রান্তিক কৃষকরা। ন্যায্য দাম না পাওয়ায়- ক্ষেতে আগুন দেওয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভও করেছে তারা। এ ক্ষেত্রে সময়মতো চাল আমদানি বন্ধ না করা কিংবা আমদানি শুল্ক না বাড়ানো এবং সঠিক সময়ে ধান ক্রয় না করার কড়া সমালোচনা করে সিপিডি।

এর খেসারত হিসেবে আগামী বাজেটে সরকারকে, কার্ডধারী প্রত্যেক কৃষককে পাঁচ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এক ধরনের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার এমন প্রকট চিত্র কোনো খাতেই বোধহয় এমনভাবে নেই, যতখানি কৃষকের সঙ্গে করা হয়েছে। কৃষক অবশ্যই একটা আর্থিক ভর্তুকির দাবি করতে পারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে। এক কোটি ৮০ লাখ কার্ডধারী কৃষক আছে। তাঁদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা করে ফ্ল্যাট রেটে তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল