২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিদেশী মুদ্রায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাবে দেশী কোম্পানি

বিদেশী মুদ্রায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাবে দেশী কোম্পানি - ছবি : সংগ্রহ

অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা জারির মাত্র তিন মাসের মাথায় তা সংশোধন করল বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে বিদেশী তহবিল থেকে দেশী কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দেয়া যাবে। এতে সস্তা সুদে বিদেশী ঋণের প্রবাহ আরো বেড়ে যাবে। ফলে দেশের ওপর বিশাল অঙ্কের বিদেশী ঋণের দায় আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মূল ব্যাংকিংয়ের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) ঋণ। বর্তমানে ওবিইউতে বিদেশী ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ শ’ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। অথচ গত বছরের জুনে ছিল প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৭ জুনে ছিল ৪৬ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুনে যা ছিল ৩৮ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় কম সুদের কারণে অফশোর বাড়তি চাহিদা রয়েছে। এ দিকে অর্থপাচারের প্রমাণ পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ৩১৩ কোটি টাকা খেলাপি দেখিয়েছে এবি ব্যাংক। 

অফশোর ব্যাংকিং হলো, দেশে কার্যরত ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ প্রদানের আলাদা ইউনিট। শুধু দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দিতে এ ইউনিট গঠন করা হয়। এখন পর্যন্ত ৫২টি ব্যাংক অনুমোদন নিয়ে ৩৫ ব্যাংক ঋণ বিতরণ করছে। এ ইউনিটের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ বিদেশী ঋণ হিসেবে বিবেচিত। এর সুদের হার ৬ শতাংশের নিচে। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে কম। কারণ, ইউনিট নিয়ন্ত্রণের জন্য এত দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা বা নীতিমালা ছিল না। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংক কোনো আমানত সংগ্রহ করলেই তাদেরকে সাড়ে ১৮ শতাংশ সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে হয়। সিআরআর রাখা হয় সাড়ে ৫ শতাংশ, যা ব্যাংকগুলোকে নগদে সংরক্ষণ করা হয়। আর এসএলআর ১৩ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয় ট্রেজারি, বিল, বন্ড, বিদেশী অ্যাকাউন্টে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি সম্পদের মাধ্যমে। ওবিইউয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো বিদেশী তহবিল আমানত আকারে এনে তা বিনিয়োগ করে থাকে। স্থানীয় তহবিলের ওপর সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে হলেও বিদেশী মুদ্রায় আনা আমানতের ওপর তহবিল সংরক্ষণ করতে হয় না। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো শতভাগ বৈদেশিক তহবিলই ঋণ আকারে বিতরণ করতে পারত, যেখানে স্থানীয় তহবিলের ১০০ টাকায় সাড়ে ৮১ টাকা বিনিয়োগ করে। ফলে স্থানীয় তহবিলের চেয়ে বিদেশী তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কম ছিল। এতে কম সুদে বিনিয়োগ করতে পারত। এর ফলে ব্যবসায়ীরা বিদেশী ঋণের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।
সস্তা ঋণের লাগাম টেনে ধরতে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নীতিমালা জারি করা হয়েছিল; কিন্তু ওই নীতিমালা গতকাল শিথিল করে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

সার্কুলারে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম আরো সুষ্ঠু ও সুসংহতভাবে পরিচালনার জন্য নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, এ ইউনিটের তহবিল কোনোভাবেই সাধারণ শাখায় নেয়া যাবে না। তবে সংশোধনীতে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তহবিল মুক্তভাবে অনশোর ব্যাংকিংয়ে স্থানান্তর করা যাবে না। তবে অনশোর থেকে গৃহীত ঋণ, কর্জ, প্রযোজ্য সুদ, চার্জ ও ফি ফেরত দিতে বাধা নেই। এক ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং থেকে হতে অন্য ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে। আগের নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৬.১.১ এ উল্লেখিত রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কের সম্পূর্ণ বিদেশী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রযোজ্য শর্তাধীনে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক সব আর্থিক সেবা দেয়া যাবে। আগে নির্দিষ্ট কিছু সেবার কথা বলা হয়েছিল। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণসুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন লাগবে না। আগের নীতিমালায় দেশী ব্যাংকের ‘নস্ট্র্রো’ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অফশোর ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়। তবে এখন অফশোর ব্যাংকিংয়ের জন্য আলাদা ‘নস্ট্র্রো’ অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে বলে বলা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, দেরিতে পরিশোধের শর্তে আমদানি, রফতানি ঋণপত্র বা বিল ডিসকাউন্ট হিসাবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকের অনশোর অফশোর বহিতে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড উভয় এক্সপোজার থাকলেও ব্যাংকের সমন্বিত (সলো) হিসাবায়নে দেশীয় গ্রাহকের ওপর ফান্ডেড দাবি তৈরি করতে হবে। অফশোর ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় চলতি, সঞ্চয়ী ও মেয়াদি হিসাব খোলা যাবে। এ ধরনের হিসাবের বিপরীতে লেনদেনের জন্য দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস্ অ্যাক্ট, ১৮৮১ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ইন্সট্রুমেন্টস্ ইস্যু করা যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement