২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নতুন সংযোগ বন্ধ থাকলেও বাড়ছে গ্যাসের ব্যবহার

নতুন সংযোগ বন্ধ থাকলেও বাড়ছে গ্যাসের ব্যবহার - সংগৃহীত

ডিমান্ড নোটের সব টাকা পরিশোধ করার পরও গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছেন না আবাসিক গ্রাহকেরা। সমস্যা সুরাহার জন্য অনেকে তিতাসের বিভিন্ন শাখা অফিসে ভিড় করছেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগে জানান, এক দিকে তারা গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছেন না, অন্য দিকে ব্যাংকে জমা দেয়া অর্থও ফেরত দেয়া হচ্ছে না। অনেক গ্রাহক দুই-তিন বছর আগেই বাসাবাড়িতে রাইজার পর্যন্তও তুলেছেন, কিন্তু দেনদরবার করে এখনো সংযোগ নিতে পারছেন না। তবে বৈধ পন্থায় ব্যর্থ হয়ে অনেকে এখন বাধ্য হয়ে অবৈধ উপায়ে গ্যাসের সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করছেন। এতে গ্যাসের ব্যবহার বাড়লেও সরকার বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, দেশে বৈধ আবাসিক গ্রাহক প্রায় ৩৮ লাখ। এর মধ্যে ২৭ লাখ তিতাসের বিতরণ এলাকায়। বৈধ চাহিদাপত্র নিয়ে সংযোগের অপেক্ষায় আছেন প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক। এর মধ্যে প্রায় ৮৬ হাজার তিতাসের এলাকায়। একই সাথে অবৈধ গ্রাহক/সংযোগ আছে তিন লাখের বেশি। এই গ্রাহকেরা গ্যাস ব্যবহার করছেন। কিন্তু সরকার বিল পাচ্ছে না। অবৈধ সংযোগ বন্ধ করে অবিলম্বে আবাসিকের বৈধ সংযোগ পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছে পাইপলাইন ঠিকাদার মালিক সমিতি। 

এ দিকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সরকার কোনো প্রকার প্রজ্ঞাপন ছাড়াই শুধু মৌখিক ঘোষণা দিয়ে বাসাবাড়িতে তথা আবাসিক সংযোগ বন্ধ রেখেছে। আর এতে বিপাকে পড়েছে গ্যাস সংযোগ ও হাউজ ওয়্যারিংয়ের সাথে জড়িত ৪৩৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঈদ সামনে এসব ঠিকাদারের পরিবারে এখন চরম দুর্দিন চলছে বলে জানিয়েছেন পাইপলাইন ঠিকাদার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। তারা জানিয়েছেন, সরকার বৈধ সংযোগ বন্ধ রাখলে এখন অবৈধভাবেই গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে বেশি। এতে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে চরম অনিশ্চয়তা। তিতাসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের জাতীয় গ্রিডে শিগগিরই আমদানি করা এলএনজি যোগ হবে। এতে গ্যাসের জোগান বাড়বে। তখন আবাসিক গ্রাহকদের নতুন সংযোগ দেয়ারও সিদ্ধান্ত আসবে। তিতাসের বিপণন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে দুই দফায় জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যোগ হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের জন্য ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন বসাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। গড়ে উঠেছে গ্যাসের স্থাপনা। এতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অধিনস্ত অঞ্চলের গ্রাহকেরা সুবিধা পাচ্ছেন। আর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের অন্য অঞ্চলের গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। 

সূত্র আরো জানায়, আবাসিকের নতুন সংযোগ দেয়ার ঘোষণার পাশাপাশি একই সাথে আমদানি করা তরল বোতল গ্যাস (এলপিজি) ও তরল গ্যাসের (এলএনজি) দাম নির্ধারণ করা হবে। এ জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এলপিজি ও এলএনজির দাম নির্ধারণ ও গৃহস্থালিতে নতুন সংযোগ দেয়ার বিষয়ে পর্যালোচনা করবে এই কমিটি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) একজন সদস্যকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটি আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে সব পক্ষই একমত। 
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কিছু দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল। রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও সেখানে গ্যাস সংযোগ দেয়া শুরু করা হয়েছিল। দু’টি ক্ষেত্রেই নির্বাচনের পরে আবার সংযোগ প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়। 

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যোগ হওয়ার পর যেসব গ্রাহকের অনুকূলে চাহিদাপত্র (ডিমান্ড নোট) পাস হয়ে আছে, তারাই নতুন গ্যাস-সংযোগ পাবেন। এ ছাড়া যেসব বহুতল ভবনে বৈধ সংযোগ রয়েছে এবং সেখানে ফ্ল্যাটের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নতুন চুলা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, তাদেরও গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে।
কয়েকজন গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা নিয়ম মতো সব অর্থ তিতাসের অনুকূলে পরিশোধ করলেও দীর্ঘ দিন ধরে যোগাযোগ করেও তারা সংযোগ পাচ্ছেন না। রাজধানীর উত্তরখান এলাকার মোহাম্মদ মোশাররফ সিদ্দিকী নামের এক গ্রাহক (আইডি নং ১৪১২৩৫৬/০২) নয়া দিগন্তকে জানান, আমি ২০১৪ সালের ৬ জুন ডিমান্ড নোটের টাকা পরিশোধ করেছি। আমার চাহিদাপত্র নং ছিল ৮২৭৭। অনেক দেনদরবার করেও আমি অদ্যাবধি সংযোগ পাইনি। উত্তরখান মাদার বাড়ি এলাকার এক গ্রাহক ফিরোজা বেগম। তার বাসায় রাইজার তোলা হয়েছে অনেক আগে। (রাইজার তালিকা নং ১৮১, গ্রাহক সঙ্কেত নং ১৪১৩০১২/০২) তিনিও এখনো সংযোগ পাননি। 

পাইপলাইন ঠিকাদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: ইব্রাহীম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা প্রতি বছর নিয়ম মতো ফি জমা দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করি। কিন্তু চার বছর ধরেই আমাদের কোনো কাজ নেই। আবাসিকের সংযোগ চালু হলে আমরা ৪৩৭ জন ঠিকাদার ও আমাদের পরিবার বেঁচে যাই। 
তিতাসের বাড্ডা জোনের ঠিকাদার আব্দুস সালাম জানান, চার বছর ধরে কোনো কাজ করতে পারছি না। ঈদ সামনে আমাদের অনেকের পরিবারের চরম দুর্দিন চলছে। অনেকে ঠিকমতো ঈদ করতেও পারবেন না। সংযোগ চালু হলে অন্তত কাজ করার একটা সুযোগ আমাদের হবে। 

কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার আরেক ঠিকাদার মোহাম্মদ সাগর শেখ জানান, বৈধ সংযোগ বন্ধ থাকলেও অনেকে অবৈধভাবে সংযোগ নিচ্ছেন। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ সংযোগ চালু করলে গ্রাহকেরাও বৈধভাবে গ্যাস পাবে আর সরকারও বিপুল রাজস্ব পাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement