২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
১২তম স্প্যান স্থাপন

দুইপ্রান্তে পদ্মাসেতুর ১৮০০ মিটার দৃশ্যমান

দুইপ্রান্তে পদ্মাসেতুর ১৮০০ মিটার দৃশ্যমান - নয়া দিগন্ত

পদ্মাসেতুর জাজিরা প্রান্তের নদীর মধ্যবর্তী স্থানে সোমবার দুপুর সোয়া ১২টায় সেতুর ২০ ও ২১ নং পিলারের উপর ১২তম স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে দুইপ্রান্তে দৃশ্যমান হলো ১৮০০ মিটার। আর ১২তম স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু আরও এক ধাপ এগুলো বাস্তবতার দিকে।

এর আগে সেতুর মাওয়া প্রান্তে ২৩ এপ্রিল ১১ম স্প্যান বসানো হয়। সোমবার দুপুর সোয়া ১২টায় সেতুর ২০ ও ২১ নং পিলারের ওপর ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি বসানো হয়। এ নিয়ে সেতুর জাজিরা প্রান্তে নয়টি, মাওয়া প্রান্তে দুটি ও নদীর মাঝে ১টি স্প্যান বসানো হলো।

সূত্র জানায়, মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১২তম স্প্যানটি প্রস্তুত ছিল। সোমবার সকাল সোয়া ৯টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার শক্তিশালী ভাসমান ‘তিয়ান-ই’ ক্রেন বহন করে রওয়ানা দেয়। ১০টা ৫মিনিটে স্প্যানটি নিয়ে ২০ ও ২১ নং পিলারের কাছে পৌঁছায়, এরপর থেকেই স্প্যান বসানোর কাজ শুরু করে প্রকৌশলীরা। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে স্প্যানটিকে সেতুর ২০ ও ২১ নং পিলারের উপর বসানো হয়।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সম্পন্ন এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মাসেতুর প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। এর মধ্যে ২১টি পিলার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে পদ্মাসেতু। ১২ তম স্প্যানটি বসানোর পর পদ্মাপাড়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিমাসেই স্প্যান বসানো হবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হুমায়ুন কবীর। দোতলা এ সেতুর নিচতলায় চলবে ট্রেন। স্থাপন করা স্প্যানগুলোয় এখন রেলের স্লাব বসানোর কাজ চলছে।

জাজিরা প্রান্তের স্প্যান গুলোয় ১২৮টি স্লাব বসানো হয়েছে। পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৫৯টি স্লাব বসানো হবে। মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডেও স্প্যান ও স্লাব বসানোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা বহমুখী সেতু প্রকল্পের ৬৫ ভাগ কাজ ও সেতুর প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে সবকয়টি স্প্যান বসিয়ে সেতুটি দৃশ্যমান করে তোলা হবে বলে আশাবাদও ব্যক্ত করে সেতু কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নং পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান, ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নং পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যান, ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নং পিলারের ওপর তৃতীয় স্প্যান, ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নং পিলারের ওপর চতুর্থ স্প্যান, ২৯ জুন ৪১ ও ৪২ নং পিলারের ওপর পঞ্চম স্প্যান, গত ২৩ জানুয়ারী ৩৬ ও ৩৭ নং পিলারের ওপর ৬ষ্ঠ এবং গত ২০ ফেব্রুয়ারী ৮ম স্প্যান বসানো হয়েছিল।

এর আগে গত বছর মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নং পিলারের উপর একটি স্প্যান বসানো হয়। ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১৩ ও ১৪ নং পিলারের উপর ১০ম স্প্যানটি স্থাপন করা হয়। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪নং পিলারের উপর ১১তম স্প্যান বসানো হয়।

এদিকে স্প্যানের পাশাপাশি সেতুতে রেলপথের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। বহুল আলোচিত পদ্মাসেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল।

পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুইপ্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

পদ্মাসেতুর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর জানান, জাজিরা প্রান্তে সেতুর ২০ ও ২১ নং পিলারের ওপর বসানো হয় স্প্যানটি। এ পর্যন্ত পদ্মাসেতুতে ১২টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো সেতুর ১৮০০ মিটার।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement

সকল