২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আইনের ফাঁকে বের হয়ে যাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা

আইনের ফাঁকে বের হয়ে যাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা - সংগৃহীত

বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনর্গঠনের নামে খেলাপিমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি আইনের ফাঁক গলিয়েও বের হয়ে যাচ্ছেন অনেক ঋণখেলাপি। তারা উচ্চ আদালত থেকে ঋণখেলাপির ওপর স্থগিতাদেশ নিচ্ছেন। এতে নিয়মিত হয়ে যাচ্ছে তাদের ঋণ। এরই ফাঁকে আবার তারা নতুন করে ঋণ নিচ্ছেন। ঋণ পরিশোধ না করায় আবার খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণের বোঝা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, উচ্চ আদালতে রিট করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে (কেন্দ্রীয় ঋণ তথ্য ভাণ্ডার) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন গ্রাহকের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিদর্শনে গিয়ে খেলাপি করে থাকে। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ না করলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী খেলাপি করে থাকে। সাধারণত, কোনো ঋণের কিস্তি ৩ মাস পরিশোধ না হলেই নি¤œমানের খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করত। আর ৯ মাস পার হলেই মন্দ মানের খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য আদালতে মামলা করা হয়। যদিও বর্তমানে ঋণখেলাপি হয়ে ৬ মাস পর্যন্ত সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা জুন থেকে কার্যকর হবে।

সাধারণত, কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ ঋণখেলাপি হলে নতুন কোনো ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি কোনো জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তাই নতুন ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যাবসায়ী গ্রুপগুলো খেলাপি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে থাকে। নতুন ঋণ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ঋণতথ্য ভাণ্ডার তথা সিআইবি থেকে অনাপত্তি নিতে হয়। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিতে হতো এ অনাপত্তিপত্র। এখন সিআইবি অনলাইন করায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকেই এ অনাপত্তি দেয়া হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নতুন ঋণ পাওয়ার জন্য খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করে উচ্চ আদালতে যান। তারা উচ্চ আদালত থেকে কয়েক মাসের জন্য খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ নেন। অর্থাৎ ওই সময়ে তাকে ঋণখেলাপি বলা যাবে না। আদালত ওই ঋণ নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে ওইসব ঋণখেলাপি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে চিহ্নিত করা হলেও পরে তা নিয়মিত হিসেবে রাখতে বাধ্য হয়। 

ঋণখেলাপিরা উচ্চ আদালত থেকে স্থাগিতাদেশ নিয়ে আবার তারা নতুন করে ঋণ নেন। এভাবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপ একাধিক ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। আইনের ফাঁক গলিয়ে ঋণ নেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকেরও করার কিছু থাকে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর ফলে এক দিকে কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ বের করে নিচ্ছেন, অপরদিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কিছু সময়ের জন্য গ্রাহকরা ঋণখেলাপির দুর্নাম থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাধারণত, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঋণখেলাপিরাই এই সুযোগটি বেশি নিচ্ছেন। এর সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহকের ঋণ বাণিজ্যিক ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করলে, গ্রাহকের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারেন। আদালতে রিট করে তাকে ঋণখেলাপি বলা যাবে না এই মর্মে নির্দেশনা পেতে পারেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আদালতের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে যথাযথ যুক্তি উপস্থাপন করে রিট খারিজ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। একই সঙ্গে ওই ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিজস্ব সিআইবিতে আবার খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় ব্যাংকগুলোর ওপর পরিদর্শন করার সময় এ বিষয়ে নানা অনিয়ম উঠে আসে। যেমন, গ্রাহক উচ্চ আদালতে রিট করে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ নিচ্ছেন। এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আদালতের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে যথাযথ যুক্তি উপস্থাপন করে রিট খারিজ করেন না। নেয়া হয় না যথাযথ আইনি পদক্ষেপ। এভাবে গ্রাহকের সাথে যোগসাজশ করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাও নতুন করে ঋণ বের করে দিতে সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি বলেন, প্রভাবশালী ঋণখেলাপি হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন না।


আরো সংবাদ



premium cement