২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ ও কাল : তুমুল উত্তেজনা

সুপ্রিম কোর্ট বার - সংগৃহীত

আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দু’দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ আজ বুধবার শুরু হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে ভোট গ্রহণ করা হবে। কার্যনির্বাহী কমিটির মোট ১৪টি পদে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কাল বৃহস্পতিবার রাতে ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হবে। 
এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী প্যানেলের মধ্যে। আইনজীবীরা মনে করেন, উৎসবমুখর পরিবেশে সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোটগ্রহণ হবে। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মনে করেন, এবার দেশের শীর্ষ আদালতের আইনজীবীরা গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পক্ষে ভোট দেবেন। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ভোটারদের কাছে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার না থাকা, অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি মামলায় জামিন না দেয়া এবং তাকে একের পর এক মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা, বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও দমন-পীড়নের বিষয়গুলো তুলে ধরছেন। অন্যদিকে সরকার সমর্থক প্যানেল আইনজীবীদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাস দিচ্ছেন। 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে আইনজীবীদের সংখ্যা বাড়ায় তাদের বসার জায়গার অভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। তবে আইনজীবীদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের নকশা পাস হয়ে থাকলেও সমিতিতে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাজেট বরাদ্দ হচ্ছে না। এ বিষয়টিও ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবিরা। সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, দেশের শীর্ষ আদালতের আইনজীবীদের এখানে দু’টি কাজ হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য কাজ করা। আমরা এ দুটি বিষয় এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য ফাইট করে যাচ্ছি। দেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নেই, সরকারের হস্তক্ষেপ সবখানেই। আইনজীবীরা সরকারের হস্তক্ষেপকে প্রতিহত করার জন্য অতীতে ভোট দিয়েছেন। দেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা না থাকলে গণতন্ত্র দুর্বল হবে এবং সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়বে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দুর্বল থাকবে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে। মানুষ ন্যায়বিচার পেলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। 

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আজ আমরা গণতন্ত্রহীন দেশে আছি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা অত্যন্ত বিজ্ঞ, তারা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। তারা গণতন্ত্রের জন্য, সাংবিধানিক শাসনের জন্য অতীতে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। আমি আশা করি, এবারো তারা আমাদের ভোট দেবেন। দেশের সার্বিক অবস্থা এবং গণমানুষের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ, দেশে কী হচ্ছে-না-হচ্ছে তারা জানেন। আমরা প্রত্যাশা করছি, তারা ভোট দিয়ে আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলকে বিজয়ী করবেন। 

অন্যদিকে সরকার সমর্থক সাদা প্যানেল থেকে এবারের সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নুর দুলাল বলেন, এবার কোনো পদেই নমিনেশন নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। সবাই আমাদের প্যানেলকে সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেছেন। আশা করছি এবারের নির্বাচনে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হতে পারব। আর আমি নির্বাচিত হলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে অবশ্যই দলীয় রাজনীতিমুক্ত রাখার চেষ্টা করব।

নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। আর সম্পাদক পদে এবারো আছেন টানা ছয়বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। অন্যদিকে সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা) প্যানেলের সভাপতি পদে সমিতির সাবেক সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক পদে বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সম্পাদক আবদুন নুর দুলাল নির্বাচন করছেন। এ ছাড়াও সভাপতি পদে আইনজীবী এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান এবং সম্পাদক পদে মনির হোসেন নির্বাচন করছেন। 

বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল : সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়া বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন, সহসভাপতি (২টি) পদে মো: আবদুল জব্বার ভূইয়া ও আবদুল বাতেন, কোষাধ্যক্ষ পদে মো: ইমাম হোসেন, সহসম্পাদক (২টি) পদে মো: মুজিবুর রহমান ও শরীফ ইউ আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য পদে রাশিদা আলীম ঐশী, মো: উসমান চৌধুরী, কাজী আকতার হোসেন, মো: সাইফুর রহমান, মো: সাইফ উদ্দিন রতন, মোহাদ্দেস উল ইসলাম টুটুল ও সৈয়দা শাহীন আরা লাইলী। 

সরকার সমর্থক সাদা প্যানেল : সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়া সরকার সমর্থক সাদা প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন, সহসভাপতি (২টি) পদে বিভাষচন্দ্র বিশ্বাস ও মো: জসিম উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ পদে সৈয়দ আলম টিপু, সহসম্পাদক (২টি) পদে মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া ও কাজি শামসুল হাসান শুভ, কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মোহাম্মদ জগলুল কবির, মশিউর রহমান, শামীম সরদার, আফিয়া আফরোজি রানী, আওলাদ হোসেন ও হুমায়ূন কবির। এবার সুপ্রিম কোর্ট বারের মোট সদস্য আট হাজার ৮৮ জন। সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন সাবকমিটি গঠন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement