গ্যাসের দাম ১০৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব তিতাসের
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৩ মার্চ ২০১৯, ০৬:০৪
সব শ্রেণীর গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম গড়ে ১০৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গৃহস্থালি পর্যায়ে দুই বার্নার চুলার জন্য গ্যাসের দাম ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার ৪৪০ টাকা এবং এক বার্নার চুলার দাম ৭৫০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। শিল্প ও সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করলে শিল্পের চাবি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে রেখে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি শুধু শিল্প বিকাশকেই বাধাগ্রস্ত করবে না, দেশের শিল্পকেও ধ্বংস করবে।
গতকাল গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে এমনটিই জানিয়েছেন তিতাস কর্তৃপক্ষ ও শিল্পোদ্যোক্তারা। রাজধানীর ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বিইআরসি এ শুনানির আয়োজন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মো: আব্দুল আজিজ খান, মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভূঁইয়া। অপর দিকে, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছেন জ্বালানি খাতের বিশ্লেষক, ভোক্তা ও দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
শুনানিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প বণিক সমিতির ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, শুধু দাম বাড়ানোর সময় আমাদের ডাকা হবে আর বিশ্ববাজারে দাম কমলে কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না, এটি ঠিক হয়। গত কয়েক বছরে মজুরি ও অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির সাথে আমাদের ২৯ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে উদ্যোক্তারা দেউলিয়া হয়ে যাবে এবং নতুন শিল্পোদ্যোক্তা তৈরি হবে না। এতে কমসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি আরো বলেন, দেশে কোনো উদ্যোক্তা নতুন বিনিয়োগ করতে এলে তিনি জানেন না, তার জ্বালানি ব্যয় কত হবে। অথচ প্রতিযোগী দেশসহ পৃথীবির অন্যান্য দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা আগাম ধারণা পান তাদের জ্বালানি ব্যয় কত হবে। আগে থেকেই জ্বালানি ব্যয়ের পূর্বাভাস পাওয়া যায়।
এ থেকে ধারণা করে তারা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু আমাদের এখানে হরহামেশাই বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। ফলে একজন উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করে ঝুঁকির মুখে পড়ে যান। তিনি ব্যবসার জন্য সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে একটি যৌক্তিক জ্বালানির দরের পূর্বাভাস দেয়ার দাবি জানান।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, হাইকোর্ট সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের থাকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে কমিশন ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে পারে না, সেই কমিশন থাকলেই বা কী না থাকলেই কী একদিন জনগণ এমন প্রশ্ন করতে পারে। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক এবং বেআইনি। বিতরণ কোম্পানিগুলো লাভ করার পরেও দাম বাড়াতে চাইছে। তিনি বলেন, নতুন ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি এখনো আসেনি। বিইআরসিও জানে আগামী এপ্রিলে এই এলএনজি আসবে না। তারপরও অদৃশ্য ইশারায় বিইআরসি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করছে। তিনি বলেন, সরকার বলছে পর্যায়ক্রমে চার হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসবে। কিন্তু এতে কী পরিমাণ ব্যয় বাড়বে তা ভোক্তার জানা উচিত। কারণ, যে ব্যবহার করবে সেই যদি না জানে তাহলে কী করে সে দাম পরিশোধ করবে।
তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্যাসে দাম বৃদ্ধির গণশুনানি হাস্যকর। তিনি বলেন, আমরা ২০১২ সাল থেকে আবেদন করে বসেছিলাম। সব শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। এখন এসে বলা হচ্ছে দাম বৃদ্ধি করা হবে। তাহলে আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান কী করে করব। তিনি বলেন, তিতাস তার শেয়ার হোল্ডারদের ৩৫ শতাংশ মুনাফা দিচ্ছে। কিন্তু আমরাতো এক থেকে দুই ভাগও ব্যবসা করতে পারি না। তারা কী করে সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে এত বেশি মুনাফা দেয়।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট মোহম্মদ আলী খোকন বলেন, আমাদের কাছ থেকে বাতাস দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছে তিতাস। তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির পর আমরা বারবার বলেছি আমাদের আঙ্গিনায় ইভিসি মিটার লাগিয়ে দেয়া হোক। যাতে আমরা প্রেশার অনুযায়ী গ্যাসের দাম দিতে পারি। কিন্তু আমাদের কথা শুনছে না তিতাস। আমরা আমাদের অপরাধ বুঝতে পারছি না। আমাদের যা গ্যাস দেয়া হচ্ছে তার থেকে বেশি বিল নিচ্ছে বিতরণ কোম্পানি। কিন্তু এরমধ্যেই আবার নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এবার অন্যায়ভাবে এই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাবি বিইআরসির কাছে দিয়ে যাব। এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না। তিনি বলেন, তৈরী পোশাক শিল্প ৪০ থেকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি করছে। তার পেছনে আমাদের টেক্সটাইল মিলের অবদান রয়েছে। পেছনে আমাদের ১৭ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করছি। নইলে এই অর্থ বিদেশে চলে যেত। গ্যাসের দাম বাড়লে টেক্সটাইল মিল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা