১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঋণপ্রবাহ কমিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা

ঋণপ্রবাহ কমিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা
ঋণপ্রবাহ কমিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা - ফাইল ছবি

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমিয়ে আগামী ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ছয় মাসের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী ছয় মাসের জন্য তা কমিয়ে সাড়ে ১৬ শতাংশ করা হয়েছে। তবে বাড়ানো হয়েছে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ। গত ছয় মাসে সরকারি ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। আগামী ছয় মাসের জন্য তা বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির গতকাল ২৭তম মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেইঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইজার আল্লাহ মালিক কাজমী, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজার এস কে সুর চৌধুরী, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো: আখতারুজ্জামানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর গত ছয় মাসের মুদ্রানীতির বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গেল ছয় মাসে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ভালো হওয়ায় ডিসেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়ে ৬ দশমিক ২১ শতাংশে হয়েছে। গত জুনে যা ছিল ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে নানা কারণে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে ডিসেম্বর শেষে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ হয়েছে। জুনে যা ছিল ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

গত ছয় মাসে বেসরকারি খাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু অর্জন হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার কারণ সম্পর্কে গভর্নর বলেন, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

ডলারের দাম বাড়ছে, বাড়ছে সরকারি ঋণ, এ কারণে ব্যাংকিং খাতে ডলার ও টাকার সঙ্কট রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কিভাবে সম্ভবÑ এমন এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। আশা করছি, বিনিয়োগ ও উৎপাদন কর্মকাণ্ড আরো বাড়বে। এতে জাতীয় প্রবৃদ্ধির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।

ব্যাংকিং খাতে অস্বাভাবিকভাবে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, এতে কমে যাচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা। খেলাপি ঋণ কমানোর কী পদক্ষেপ নিয়েছেনÑ এমন এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর জানান, খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এ জন্য পৃথক দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি ব্যাংকগুলোকে নিয়ে কাজ করছে আর বাংলাদেশ ব্যাংক সমগ্র ব্যাংকিং খাত নিয়ে কাজ করছে।

আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে বাজারে ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে, আবার এলএনজিসহ বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানি বেড়ে গেছে, কিন্তু কাঙ্খিত হারে ডলারের সরবরাহ বাড়ছে না, এমন পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার কিভাবে স্থিতিশীল থাকবে, প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধিতে উদ্বেগের কিছু নেই। বরং ডলারের বিপরীতে টাকা বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম খুব বেশি উঠানামা করছে না। এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

ঋণের সুদ হার কমিয়ে আনার শর্তে ব্যাংকগুলোকে নানাভাবে ছাড় দেয়া হয়েছিল। সিআরআর হার ১ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছিল। সরকারি আমানতের অর্ধেকের ভাগিদার করা হয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য। কিন্তু ঋণের সুদ হার কমছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করণীয় কী প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ হার অনেক কমিয়ে এনেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তদারকি করা হচ্ছে। তাদের ঘোষিত হারের চেয়ে বেশি সুদ ধার্য করলেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আগামী মার্চ মাসের পর থেকেই ঋণ আমানতের অনুপাত সাড়ে ৮৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। কিন্তু ১১টি ব্যাংকের ঋণ আমানতের অনুপাত এখনো নির্ধারিত অনুপাতের চেয়ে অনেক বেশি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, ৫৯টি ব্যাংকের মধ্যে ১১ ব্যাংকের এডি রেশিও কিছুটা বেশি রয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তা নির্ধারিত অনুপাতে নামিয়ে আনতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন।

অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বিদ্যমান ব্যাংক অনেক বেশি। কিন্তু এ মুহূর্তে আরো তিনটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর সরকারের কোনো চাপ রয়েছে কি না এ বিষয়ে গভর্নর বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে তার ওপর কোনো চাপ নেই।

রিজার্ভ চুরির বিষয়ে গভর্নর জানান, নিউ ইয়র্কে রিজার্ভ চুরির মামলা দায়ের করা হচ্ছে। কোন আদালতে, কার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে এমনই এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, নিউ ইয়র্কের ফেডারেল সাউদার্ন কোর্টে মামলাটি দায়ের করা হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে অবস্থান করছে। তবে কার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে এবং কত টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে, তা শিগগিরই জানানো হবে।


আরো সংবাদ



premium cement