২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রিজার্ভ চুরির মামলা করতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন কর্মকর্তারা

- ফাইল ছবি

বাংলাদেশে ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করার জন্য আজ যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল। তবে কাদের বিরুদ্ধে এবং কী মামলা করা হবে, তা সেখানে গিয়ে আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

বাংলাদেশে ব্যাংকের মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলছেন, মামলা করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েই এই দলটা যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। সেখানে ল'ফার্মের সঙ্গে আলাপ করে মামলার বিষয়ে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিপাইনের আরবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সহায়তা নেয়া হবে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশে ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৮১০ কোটি টাকা চুরি হয়। যদিও সেটি প্রকাশ পায় একমাস পরে।

সুইফট কোডের মাধ্যমে ৮১০ কোটি টাকা শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ২৭৩ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া গেলেও, বাকি ৫৩৭ কোটি টাকা এখনো উদ্ধার হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরণের ঘটনার তিন বছরের মধ্যে মামলা না করলে সেটি গুরুত্ব কমে যায়। ফলে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।

ওই চুরির ঘটনায় আরবিসির শাখা ব্যবস্থাপককে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে ফিলিপাইনের আদালত।

যদিও এরপরে ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং অর্থ ফেরত আনার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। ঘটনার পরপরই তৎকালীন গর্ভনর আতিউর রহমান পদত্যাগও করেন।

এরপর সাবেক গর্ভনর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়, যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। কিন্তু সেই প্রতিবেদন সরকার প্রকাশ করেনি। এই ঘটনার তদন্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগও।

যেখানে গত তিনবছরেও তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের এই আইনি পদক্ষেপ থেকে তাহলে কতটা আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক?

মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলছেন, "দেখুন, আমাদের এখানে সিআইডি তদন্ত করেছে। আন্তর্জাতিক মামলা করার জন্য যেসব প্রস্তুতি, সতর্কতা দরকার তার সবই নেয়া হয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি, এখানে আমাদের কোন দুর্বলতা নেই। অতএব আশা করা যায়, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করলে আমরা কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাবো।"

তবে কতদিনের ভেতর সেই ফলাফল পাওয়া যাবে, সেটি তিনি জানাতে পারেননি।

সিআইডি বলছে, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের ভেতরের চক্রটি রিজার্ভের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে দুর্বল করেছে। এর ফলে হ্যাকাররা বা বিদেশী চক্র সহজেই অর্থ চুরি করতে পেরেছে।

গত ২০ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, এ মাসের ভেতরেই মামলা হবে। এই মামলা দেখভালের জন্য বাংলাদেশের একজন আইনজীবী রয়েছেন, তেমনি আমেরিকায়ও একজন আইনজীবী আছেন। তারা যৌথভাবে সময় নির্ধারণ করে মামলা করবেন।

''কতজনকে আসামি করা করব, কতজনকে বাদী করব এগুলো দুই দেশের আইনজীবীরা বসে ঠিক করবেন,'' তিনি বলেন।

তদন্তের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যন্তরীণভাবে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে বিষয়েও মুখ খুলছেন না ব্যাংকটির কেউ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্তের এই অবস্থা কোনমতেই স্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন, দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

গত বছর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "পুরো বিষয়টির মধ্যে সরকারের একটা দায়িত্ব ছিলো, ব্যাংকের একটা দায়িত্ব ছিলো এই ঘটনায় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলো কি-না সেটা খতিয়ে দেখা এবং থাকলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। সেটি হয়নি।"

তিনি বলছেন, "শুধু বলা হচ্ছে, বিষয়টা তদন্তাধীন। কী তদন্ত হচ্ছে এবং সরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে কি-না, সে সম্পর্কে আমরা কিন্তু কিছু জানতে পারছি না।

"যারা যোগসাজশে আছেন বলে অভিযোগ উঠছে, তাদেরকে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে কি-না সে প্রশ্নটা ওঠা খুবই স্বাভাবিক যতক্ষণ না আসলে কী ঘটেছিলো তা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা না হয়।"


আরো সংবাদ



premium cement