২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুদহার কমায়নি ৪০ ব্যাংক

সুদহার কমায়নি ৪০ ব্যাংক - ছবি : সংগৃহীত

গত ১ জুলাই থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে এবং তিন মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারমান্য নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি এ ঘোষণা দিয়েছিলেন গত ২০ জুন। কিন্তু ঘোষণার প্রায় পাঁচ মাস পার হতে চললেও ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনেনি বেশির ভাগ ব্যাংক। আবার সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন ঋণের সুদহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এ ঘোষণার পরও প্রায় চার মাস অতিবাহিত হতে চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ৪০টি ব্যাংকের গড় ঋণের সুদহার এখনো ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ ব্যাংকের গড় ঋণের সুদহার ১০ থেকে প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। 

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানো ছাড়া ঋণের সুদহার কমানো সম্ভব হবে না। কেননা, কম সুদে আমানত মিলছে না। পরিচালন ব্যয়ও রাতারাতি কমানো সম্ভব হবে না। এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া। সবমিলে ঋণের সুদহার কমানোর ঘোষণা শুধু ঘোষণাতেই বন্দী থাকছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুলাই শেষে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত ৩১ অক্টোবর শেষে তা কমে নেমেছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে।

কিন্তু আমানতের গড় সুদ হার যে হারে কমেছে ঋণের সুদহার সেই হারে কমায়নি। যেমন, গত জুলাই শেষে ঋণের গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যেখানে ৩১ অক্টোবর শেষে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ হয়েছে।
এর মধ্যে ৩০টি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার ১০ শতাংশ থেকে প্রায় ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। আর ১০ ব্যাংকের গড় সুদহার সোয়া ৯ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। 

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন আমানতের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু ঋণের সুদহারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বেশির ভাগ ব্যাংকই জানিয়েছে ‘ঋণের সুদহার কমানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, বিশেষ করে বড় বড় শিল্পগ্রপ ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছে না। ফলে প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ দেখাচ্ছে প্রকৃতপক্ষে বেশির ভাগ ব্যাংকের তার চেয়ে বেশি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে যথাযথভাবে পরিদর্শন করলে এ চিত্র বের হয়ে আসবে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিলের বড় একটি অংশ গ্রাহকদের কাছে আটকা পড়ে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোর বেশি হার প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

কিন্তু ফারমার্স ব্যাংক ঘটনার পর ও অন্যান্য কারণে ব্যাংকিং খাতে কিছুটা আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই তারল্য সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এ তারল্য সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছিল। গত জুনের আগে ব্যাংকিং খাতের এ পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে আমানত সংগ্রহ করতে গিয়ে আমানতের সুদহার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১১ শতাংশে উঠে গিয়েছিল। এতে বেড়ে যায় অস্থিরতা। এ পরিস্থিতিতে বিএবি ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে এবং তিন মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। ফলে সব ব্যাংকই একযোগে আমানতের সুদহার ছয় শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে। কিন্তু ঋণের সুদহার এখনো সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement