২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

১৩ টাকার চাল ৭০ টাকা হলো যেভাবে

-

২০০৩ সালে এক কেজি নাজিরশাইল চালের দাম কেজিপ্রতি ছিল ১৯ টাকা। কিন্তু গত বছর এ চাল বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। আর ১৯৯৩ সালে বিএনপির প্রথম আমলে এ চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৩ টাকা।

অন্য দিকে লতা যা বর্তমানে মিনিকেট চাল নামে পরিচিত কেজি ছিল ১৯৯৩ সালে ১৭ টাকা। গত বছর এ চালের কেজি ছিল ৬৫ টাকা।

শুধু নাজিরশাইল আর মিনিকেট নয়, মোটা চালের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গত বছর বাংলাদেশে রেকর্ড রচিত হয়। ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে মোটা চাল। গত বছর মাত্র তিন থেকে চার মাসের ব্যবধানে কোনো কোনো মোটা চালের দাম কেজিতে ২০ টাকারও বেশি বৃদ্ধি পায়। এতে দুর্যোগ নেমে আসে লাখ লাখ গরিব মানুষের জীবনে।

১৯৯০ সালে নাজিরশাইল চালের কেজি ছিল ১৫ টাকা। ১৯৯৮ সালে হয় ২১ টাকা। ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রতি কেজির দাম ১৯ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এ চালের দাম। ক্যাবের তথ্য অনুসারে ২০০৬ সালেও প্রতি কেজি নাজিরশাইল চালের দাম ছিল ২৫ টাকা। কিন্তু ২০০৬ সালের পর থেকে বাড়তে শুরু করে সব ধরনের চালের দাম। ২০০৭ সালে নাজিরশাইলের কেজি হয় ৩৩ টাকা। পরের বছর ২০০৮ সালে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ টাকা। ২০১১ সালে ৫০ এবং ২০১৪ সালে হয় ৫৭ টাকা কেজি।
কেরানীগঞ্জের ইমামবাড়ি রোডের মুদি দোকান ব্যবসায়ী নান্নু মিয়া বলেন, গত বছর ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে নাজিরশাইল। আর গতকাল নতুন নাজিরশাইলের কেজি ৬০ টাকা এবং পুরনো নাজিরের কেজি ৬৫ টাকা ছিল। রাজধানীর সিপাহিবাগের চাল ব্যবসায়ী শফিক বলেন, গত বছর ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন নাজিরশাইল। মিনিকেট ৬৫ টাকা কেজি। আর ৫০ টাকার নিচে মোটা চাল ছিল না বলতে পারেন।

নগরের সচ্ছল পরিবার তো বটেই অনেক সাধারণ আয়ের মানুষও শৌখিন তথা চিকন চাল পছন্দ করেন। কিন্তু নাজির ও অন্যান্য চিকন চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সাধারণ আয়ের মানুষ ছাড়াও অনেক সচ্ছল পরিবারও এ চাল কেনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ১৯৯৩ সালে আউশ, আমন, ইরি বোরো, পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা কেজিতে। ২০০৩ সাল পর্যন্ত এসব চাল ১৫ থেকে ১৮ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত। ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভালোমানের পারিজাত বা স্বর্ণা চালের কেজি ছিল ১৯ টাকা। সরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির মূল্য তালিকায় দেখা যায় ২০০৬ সালেও মোটা চালের কেজি ছিল ১৭ টাকা। এরপর কেবলই বাড়তে থাকে দাম। ২০১০ সালে পারিজাত ৪৬ টাকা এবং পাইজাম চাল ৩৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। আর গত বছর এসব মোটা চাল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।

চালের দাম বৃদ্ধি গত বছর দেশজুড়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়। হাওরে বন্যায় ফসলহানি, অনেক চাল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারেও যথাসময়ে পর্যন্ত চাল না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দেশে চাল তথা খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দেয়। গত বছরের শুরুতে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে চার মাসের ব্যবধানে গরিব ও সাধারণ মানুষের নিত্যপণ্য মোটা চালের দাম কেজিতে ১৮ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ফলে খুচরা বাজারে কোনো কোনো মোটা চালের দাম কেজিতে ২০ টাকার উপরে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিপদের মুখোমুখি হয় গরিব মানুষ।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং- সানেম নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় শুধুমাত্র চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত বছর কয়েক মাসের মধ্যে দেশে পাঁচ লাখ ২০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায় বা গরিব হয়ে যায়। গত বছর ২৩ ডিসেম্বর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সানেমের প্রতিবেদনে বলা হয় গত বছর ২১ ডিসেম্বর চিকন চালের দাম ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা এবং মোটা চালের দাম ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে গরিব মানুষকে তাদের দৈনন্দিন আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি ব্যয় করতে বাধ্য হয় খাদ্যের পেছনে।

দেশব্যাপী চাল সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গত বছর ১৫ জুন বিবিসি বাংলা সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য মোটা চালের দাম এখন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। এক কেজি চাল কিনতে হচ্ছে ৪৮ টাকায়।



আরো সংবাদ



premium cement