১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
 তিন দশকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি

৪০ টাকার মসুর ডাল রাতারাতি হলো ১৪০ টাকা

মসুর ডাল - ছবি : সংগৃহীত

এক কেজি দেশী মসুর ডাল ২০০২ সালে পাওয়া যেত ৪০ টাকায়। ২০০৫ সালেও এক কেজি মসুর ডালের দাম ছিল ৪৯ টাকা। কিন্তু ২০১৬ সালে এর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৯ টাকা। 

গরিবের ডাল-ভাত, গরিবের গোশত প্রভৃতি হিসেবে প্রচলন রয়েছে মসুর ডালের। অনেক বছর ধরে গরিবের গোশত এ মসুর ডালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে ছিল। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকেই এটি সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে যেতে থাকে। ২০০৭ সালে এক কেজি দেশী মসুর ডালের দাম ৬১ টাকা থাকলেও ওই বছরেই দাম বেড়ে ৭৬ টাকা হয়। ২০০৮ সালে এক লাফে এর দাম বেড়ে হয় ১০১ টাকা। এরপর প্রতি বছর শুধু বাড়তেই থাকে মসুর ডালসহ সব ধরনের ডালের দাম। গরিবের ডাল-ভাত কথাটি তখন হয়ে যায় অতীতের একটি প্রবাদ। দামি মসুর ডাল হয়ে যায় ধনীদের খাবার।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) গত ২৮ বছরের পণ্যমূল্য তালিকায় দেখা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মসুর ডালের সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৯৯১ ও ১৯৯৩ সালে। এ সময়ে খুচরা ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো মসুর ডাল। ১৯৯৪ সালেও ছিল ২৯ টাকা কেজি। 

১৯৯৫ সালে হঠাৎ করে দাম কিছুটা বেড়ে ৪০ টাকা হয়। তবে এরপর দীর্ঘদিন দাম বাড়েনি। ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৩৯ থেকে ৪৪ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে দাম। ক্যাবের মূল্য তালিকা অনুযায়ী ২০০৪ সালে ৪৭ এবং ২০০৫ সালে ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় মসুর ডাল। ২০০৬ সালের পর অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে দাম এবং ২০০৮ সালের পর থেকে চলতি বছরের আগ পর্যন্ত ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী দেশী মসুর ডাল ১০০ টাকার নিচে নামেনি। ২০১২ সালে ১১৫ টাকা, ২০১৩ সালে ১১৯ টাকা, ২০১৪ সালে ১০৮ টাকা, ২০১৫ সালে ১২৩ টাকা এবং ২০১৬ সালে ১৩৯ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় দেশী মসুর ডাল। 
২০১৬ সালে রাজধানীর কোনো কোনো বাজারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরেও বিক্রি হয়েছে চিকন দানার মসুর ডাল। 

অন্য দিকে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত দু’টি বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১১ সালের ৩০ জুন ৮০ টাকা, ২০১২ ও ২০১৩ সালের ৩০ জুন ১০৫ টাকা কেজি দরে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে দেশী মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে। আর গতকাল শনিবার রাজধানীর সিপাহিবাগ বাজারে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে দেশী মসুর ডাল। বিদেশী মসুর ডাল বর্তমানে পাওয়া যায় ৫০ টাকা কেজি দরে। 

একটা সময় ছিল যখন গরিব মানুষ আর কিছু না হোক শুধু চাল জোগাড় করতে পারলেই সস্তা ডাল আর সাথে আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়া চালিয়ে নিতে পারত। আর বাধ্য হয়ে খাওয়া সস্তা মসুর ডাল থেকে কিছুটা হলেও পূরণ হতো আমিষের চাহিদা। কয়েক বছর আগেও গ্রামগঞ্জে ঘরে ঘরে একটি বা দুইটি তরকারির সাথে অবশ্যই থাকত মসুর ডাল। অনেকে বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ ডাল দিয়ে খেত প্লেটভর্তি ভাত। এক সময় দেশের প্রায় সব হোটেলে ভাতের সাথে দেয়া হতো ফ্রি ডাল। কিন্তু উচ্চমূল্যের কারণে ধীরে ধীরে গরিব ও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে মসুর ডাল। রাস্তার পাশের হোটেলেও এখন এক বাটি পাতলা ডালের জন্য গুনতে হয় পাঁচ থেকে দশ টাকা।

রাজধানীর খিলগাঁও বাজারের জুবায়ের স্টোরের হুমায়ুন বলেন, ১৯৮৪ সালে আমি এক পোয়া মসুর ডাল তিন টাকায় বিক্রি করেছি। মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারের সময় সব জিনিসের দাম যে বাড়ল আর কমার কোনো নাম নেই। ওই সময়ই দেশে জিনিসের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। 

ডালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে চাঁদপুর স্টোরের নাসির নাসির ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীন সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়ে গেছে। সেটা বিক্রি করে এখনো করে খাচ্ছে অনেকে। 

পুরনো অনেক দোকানদার জানিয়েছেন, ১৯৭০-৭১ সালে মসুর ডালের কেজি ছিল এক টাকা। এরপর দেশে বিভিন্ন জিনিসের দাম অব্যাহতভাবে বাড়লেও মসুর ডালের দাম ৩০ বছরেরও বেশি সময় ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। কিন্তু ২০০৬ সালের পর চাল, ডাল, আটা তেলসহ সব জিনিসের সাথে পাল্লা দিয়ে রকেট গতিতে বাড়তে থাকে মসুর ডালের দাম।


আরো সংবাদ



premium cement