২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৩২ টাকার সয়াবিন তেল এখন ১৩৬ টাকা

সয়াবিন তেল - ছবি : সংগৃহীত

১৯৯০ সালের কথা। সেই সময় এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৩২ টাকা। ২০০০ সালে ছিল ৩৯ টাকা। ২০০৬ সালেও এর দাম ছিল ৪৬ টাকা; কিন্তু ২০০৭ সালে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫ টাকা। পরের বছর ২০০৮ সালে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম হয় ১১৩ টাকা। 
বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিবি) ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পণ্যমূল্য তালিকায় রয়েছে এ তথ্য। 

ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৩৬ টাকা পর্যন্ত ওঠে। খোলা সয়াবিন তেলের চেয়ে বোতলজাত প্রতি লিটারের দাম পাঁচ টাকা বেশি। 

২০০৭ সাল থেকে অবিশ্বাস্য গতিতে বাড়তে থাকে মানুষের প্রতিদিনকার রান্নার অপরিহার্য এ তেলের দাম। এরপর আর কখনো ফিরে আসেনি সস্তার দিন। ১৯৯০ সালে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৩২ টাকা। ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের মাথায় এ তেলের দাম বেড়ে ৩৯ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে। এরপর ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ টাকা। যেখানে ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৩ টাকা, সেখানে ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে প্রতি লিটার সয়বিন তেলের দাম বেড়েছে ৯০ টাকা। 

তবে ১৯৯০ সালে প্রতি লিটার ৩২ টাকা হলেও ১৯৯৪ সালে সয়াবিন তেলের দাম অনেক বাড়ে এবং প্রতি লিটার ৫২ টাকায় পৌঁছে। বর্ধিত এ দাম ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ১৯৯৯ সালে ফের ৪০ টাকায় কমে আসে। এরপর ২০০২ সাল থেকে আবার বাড়তে থাকে। ২০০৬ সালে ৪৬ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে। টিসিবির ২০০৬ সালের তথ্যে দেখানো হয়েছে সয়াবিন তেলের লিটার ৪৬ টাকা। ক্যাবের তথ্যে বলা হয়েছে ২০০৬ সালে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫৫ টাকা। বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৬০ টাকা।

শাক রান্নায় তেল লাগে : ২০০৮ সালে মিরপুর ১২ নম্বর সি ব্লকে থাকতেন শাহিন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহিন সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি তখন ছিলাম সীমিত আয়ের মানুষ। মা-বাবা আর সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী নিয়ে দুই রুমের একটি বাসায় ভাড়া থাকতাম। বাড়িভাড়া দিয়ে যে টাকা থাকত তা দিয়ে মাস কেটে যেত মোটামুটি। কিন্তু হঠাৎ করে চাল-আটাসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে গেল। জীবনে কোনো দিন এর আগে এভাবে জিনিসের দাম বাড়তে দেখিনি। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে জিনিসের দাম বাড়তে থাকায় আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। 

জিনিসপত্রের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি আমাদের জীবনে একটি দুর্যোগ হিসেবে নেমে এলো। দাম বাড়ার কারণে পরিবারের অনেক খরচ বাদ দিয়ে শুধু কোনোমতে খাবার কেনার জন্য টাকা ব্যয় করতাম। কিন্তু কিছু দিন পরে সীমিত আয়ের টাকা দিয়ে পর্যাপ্ত খাবারও যেন আর কিনতে পারছিলাম না। অন্য দিকে হঠাৎ করে আয় বৃদ্ধিরও কোনো ব্যবস্থা করতে পারলাম না। ফলে জীবনে যা করিনি তাই করতে হলো আমাকে। উচ্চশিক্ষিত শাহিন চোখের পানি গোপন করে বলেন, বিডিআর শপের সামনে লাইন দিলাম কম দামে ইরি চাল কেনার জন্য। সে চাল এমনই শক্ত আর পুরনো গন্ধ ছিল যে, আমার বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী কেউই খেতে পারত না ঠিকমতো। 

শাহিন বলেন, দামি মাছ, বিশেষ করে গরুর গোশত কেনা তো প্রায় বাদই দিলাম বলতে পারেন। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে আমি রাত ৯টা-দশটায় বাজার করতে যেতাম তখন। রাতে কিছুটা কম দামে শাকসবজি পাওয়া যেত। তখন লালশাকসহ অন্যান্য শাকের দাম তুলনামূলক কম ছিল। আমার আবার শাকের প্রতি দুর্বলতা ছিল। কিন্তু দাম হলেও শাক কিনতে সাহস করতাম না কারণ নিরামিষ শাক ভাজতে হলে ভালো করে তেল-পেঁয়াজ আর রসুন দিতে হয়; কিন্তু এর প্রতিটি জিনিসের দাম ছিল তখন আকাশছোঁয়া। ফলে হিসাব করে কৃপণতা করে আমাদের চলতে হতো সে সময়।


আরো সংবাদ



premium cement