২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড়

গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির তোড়জোড়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। তাদের অভিযোগ, এমনিতেই গ্যাসের চাপ থাকে না; তার ওপর নতুন করে মূল্যবৃদ্ধিতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে। সেই সাথে কমবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাবস্থার সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, কয়েক দিনের মধ্যেই সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিইআরসি। গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাসের দাম গড়ে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। বাণিজ্যিক খাতের গ্যাসের দাম বাড়তে যাচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত। বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বিদ্যমান ১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও ভ্যাট মওকুফ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এসআরো কমিশনের হাতে আসামাত্রই নতুন মূল্যহার ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। 

উদ্বেগের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, এমনিতেই গ্যাসের চাপ কম। আমরা বিল দিচ্ছি পুরোটার কিন্তু গ্যাস পাচ্ছি কম। চাপ কম থাকায় শিল্পকারখানা ধারাবাহিকভাবে চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাসের বিলও দিতে হচ্ছে আবার ফার্নেস অয়েলও ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন করে বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে দেশের অর্থনীতি চাপে পড়বে। দ্রব্যমূল্য হু হু করে বাড়বে এবং মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। 

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার চার গুণ বেশি দাম দিয়ে বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে। অথচ এর দায় চাপানো হচ্ছে ব্যবহারকারীদের ওপর। তাদের অভিযোগ, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বর্তমানে লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। কোম্পানি পরিচালনার জন্য বাড়তি অর্থের প্রয়োজন নেই। তাই বিতরণ কোম্পানি বা পেট্রোবাংলাকে বাড়তি অর্থ দেয়া হচ্ছে না। এ অর্থে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। তহবিলের অর্থেই পেট্রোবাংলা গ্যাস খাতের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ করে। গ্রাহকের টাকায় গ্যাস খাতের উন্নয়ন হলেও আবার সেই গ্রাহককেই বাড়তি দর দিতে হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকতে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অভিযোগ উঠেছে, নতুন মূল্যহার ঘোষণার আগেই শিল্প খাতে বিদ্যমান মূল্যহারের চেয়ে বেশি মূল্য ধরে নতুন সংযোগের জন্য চাহিদাপত্র (ডিমান্ড নোট) বিতরণ করছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি বিতরণ কোম্পানি। অভিযোগে প্রকাশ, বর্তমানে শিল্প খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৭৬ পয়সা। কিন্তু চাহিদাপত্র ইস্যু করা হচ্ছে প্রতি ইউনিটের জন্য ১৪ টাকা হারে। মূলত এলএনজির জন্যই এ ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে ভুক্তভোগীরা বলেন, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির ক্রয়মূল্য দেশী গ্যাসের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি। প্রতি ইউনিট এলএনজির আমদানি ব্যয় ৩২ থেকে ৪০ টাকা। যেখানে দেশীয় প্রতি ইউনিট গ্যাসের উৎপাদন ব্যয় ৪ টাকা ৬৩ পয়সা।
এ দিকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কারণে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির যুক্তিতে দু’টি ছাড়া পাঁচ খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বিতরণ কোম্পানিগুলো। ওই প্রস্তাবের ওপর গত জুনে গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। শুনানি-পরবর্তী মূল্যায়ন শেষে নতুন মূল্যহার ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কমিশন। বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব না থাকার পরও নতুন মূল্যহারে এ গ্যাসের দামও বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কারণে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির যুক্তিতে দু’টি ছাড়া পাঁচ খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বিতরণ কোম্পানিগুলো। ওই প্রস্তাবের ওপর গত জুনে গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। শুনানি-পরবর্তী মূল্যায়ন শেষে নতুন মূল্যহার ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কমিশন। বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহ্যত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব না থাকার পরও নতুন মূল্যহারে এ গ্যাসের দামও বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

দাম না বাড়ানোর পে যুক্তি তুলে ধরে কনজুমারস অসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ব্যাংকিং খাতের মতোই তিতাসে ডাকাতি চলছে। অন্যান্য খাতেও গ্রাহক সেবার উন্নয়ন না করে বিভিন্ন চার্জ বসানো হয়েছে। এ ধরনের অতিরিক্ত মুনাফা থেকেই ব্যয়বহুল এলএনজির খরচ বহন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার ভোক্তা পর্যায়ে ৯ টাকা ০৯ পয়সা। বিদ্যমান মূল্যহার ৭ টাকা ৩৮ পয়সা। ফলে এক টাকা ৭১ পয়সা ঘাটতি বিবেচনায় মোট ৫ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা ঘাটতি দাঁড়াবে। এ ঘাটতি মূল্যহার বৃদ্ধি কিংবা সরকারি ভর্তুকি ছাড়াই এ খাতের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পদপে নিয়েই সমন্বয় করা যাবে বলে দাবি করেন ক্যাবের এই জ্বালানি উপদেষ্টা। 

সর্বশেষ গত বছরের মার্চ ও জুনে দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। সেবার আগের মূল্যের চেয়ে গড়ে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়। বর্তমানে আবাসিক মিটারযুক্ত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ১০ পয়সা। মিটারহীন সিঙ্গেল বার্নারে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৫০ ও ডাবল বার্নারে ৮০০ টাকা। আর বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ১৭ টাকা চার পয়সা। তারও আগে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে গ্যাসের দাম ১১ দশমিক ১১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল