১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সিপিডি’র বার্ষিক লেকচার অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার খ্যাতনামা অর্থনীতিবীদদের মন্তব্য

বাংলাদেশে  ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে

বাংলাদেশে  ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে - নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশে দারিদ্রতা কমলেও ক্ষুধার্ত মানুষের ক্রমেই বাড়ছে। খাদ্য, নিরাপত্তা, জ্বালানির নিশ্চয়তা ও অসমতার কারণে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে পুষ্টিহীনতার হারও কমছে না। বাংলাদেশের মতো দেশে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির উন্নয়নে বেশি জোর দেওয়া উচিত।

শনিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা: খাদ্য, জ্বালানি ও বৈষম্য’ শীর্ষক বার্ষিক লেকচারে এ কথা বলেন জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব মালয়েশিয়ার খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জোমো কাওমি সুন্দরাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। লেকচার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রফেসর জোমো কেওমি সুন্দরাম বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে আসছে। কিন্তু সে হারে পুষ্টিহীনতা কমছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেড়েছে। তাই এদেশেও এর ব্যাতিক্রম নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ দারিদ্রতায় উন্নতি করলেও নিউট্রেশনে উন্নয়ন তেমন ঘটাতে পারে না বরং বেড়েছে। বাংলাদেশকে নজর দেয়া দরকার পুষ্টিহীনতা দূর করার বিষয়ে।

জোমো কোয়ামে সুন্দরাম বর্তমানে মালয়েশিয়ার কাউন্সিল অব অ্যামিনেন্ট পারসনসের বিশেষ সদস্য। তিনি জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্সের (ডিইএসএ) অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কাজ করেছেন।

সুন্দরাম জানান, ২০১২-১৪ সময়ে সারা বিশ্বে ৮০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকত। সেই সময়ে ২০০ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগত। এ ছাড়া ৫ বছরের কম বয়সী ৪ কোটি ২০ লাখ শিশু অতিরিক্ত ওজনধারী। আর ২১০ কোটি প্রাপ্তপ্তবয়স্ক মানুষের অতিরিক্ত ওজন। তাঁর মতে, খাদ্যাভ্যাসের কারণে নানা ধরনের রোগশোকে আক্রান্ত হয় মানুষ।

জোমো কোয়ামে সুন্দরামের মতে, মানুষের জীবন রক্ষায় অর্থনীতিতে তৃতীয় বৃহত্তম বোঝা হলো অতিমাত্রায় স্থূলতা। এর আর্থিক মূল্য হলো ২ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্য দুটি হলো সশস্ত্র সংঘাত ও ধূমপান। এই দুটি বোঝার আর্থিক মূল্য হলো ২ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার করে। তিনি মত দেন, খাদ্যনিরাপত্তার জন্য উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি কেমিক্যাল ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। কেমিক্যাল ব্যবহারে স্বাস্থ্যহানির সুযোগ থাকে।

জোমো কোয়ামে সুন্দরম তাঁর বক্তৃতায় আরও বলেন, সারা বিশ্বে বৈষম্য বাড়ছে। গরিবের তুলনায় ধনীরা বেশি সম্পদশালী হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের মতো সবচেয়ে গরিব ২০টি দেশের সঙ্গে সবচেয়ে ধনী ২০টি দেশের তুলনা করেন। সেখানে তিনি বলেন, ১৯৬০-৬২ সালের দিকে সবচেয়ে গরিব ২০টি দেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ২১২ ডলার। তখন সবচেয়ে ধনী ২০টি দেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ১১ হাজার ৪১৭ ডলার। ৪ দশক পরে ২০টি গরিব দেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ২৬৭ ডলার। ৪ দশকের ব্যবধানে মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে ওই সময়ে ধনী ২০টি দেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৩৩৯ ডলার। ৪ দশকে ধনী দেশের মাথাপিছু জিডিপি তিন গুণ বেড়েছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, চীন এশিয়ার অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ভারতও এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নয়ন তথা বাণিজ্যের হাওয়া এখন এশিয়ায়। তাই এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আরও বেশি পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা উচিত।

অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে কথা বলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির বিশেষ ফেলো ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ, পরিবেশবিদ আতিক রহমান, ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ, অধ্যাপক আমিনুল করিম, আইনজীবী সারা হোসেন প্রমুখ।

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সুন্দরম বলেন, পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধে মধ্যবর্তী পদ্ধতি গ্রহণের সুযোগ নেই। এমনটি এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলেও এটা করা যাবে না। এই সুযোগ নেয়ার অবকাশ নেই যা উন্নত দেশগুলো করছে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কয়লা বা তেলভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র স্থাপন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বড় দেশগুলো করলেও বাংলাদেশ কেন করতে পারবে না এই বিতর্কে জড়ানোর সুযোগ নেই।

সোলারভিত্তিক বিদ্যুতের অগ্রগতিতে বাংলাদেশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, গ্রামীণ অঞ্চলে বাংলাদেশ সোলার সিস্টেম চালু করেছে এটা ভালো। তবে বায়ু ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে। বিশ্বব্যাপী একটি চ্যালেঞ্জ ছিল সোলারের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত সেটা রিকভারী করা গেছে। ফলে সোলারভিত্তিক বিদ্যুতায়ন কঠিন হবে না ।


আরো সংবাদ



premium cement