২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্যাংক থেকে তারা এক টাকাও নেননি

ব্যাংক থেকে তারা এক টাকাও নেননি - ফাইল ছবি

দু'টি ব্যাংকের কারণে ব্যাংকিং খাতে অনেকটা আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মন্দের সাথে ভালো ব্যাংককেও জড়ানো হচ্ছে। কিন্তু মার্কেন্টাইল ব্যাংক সব সময় বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকেছে বলে দাবি করছেন ব্যাংকটির পরিচালকেরা। এ ব্যাংক থেকে কোনো পরিচালক ঋণ নেননি। সবসময় স্বচ্ছতার সাথে ব্যাংকটি পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করেছেন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এ কারণে মার্কেন্টাইল ব্যাংক অনেক প্রথম প্রজন্মের ব্যাংককে পেরিয়ে ২০ বছরের মধ্যে প্রথম সারির চতুর্থ স্থান দখল করতে পেরেছে। তারা এখন প্রথম স্থান অর্জন করতে কাজ করে যাচ্ছে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমডি ও পরিচালকেরা এ কথা বলেন। এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মসিহুর রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান এ এস এম ফিরোজ আলম, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান এম আমানউল্লাহ, পরিচালক আলহাজ আকরাম হোসেন হুমায়ুন, মোহাম্মদ সেলিম, আলহাজ্জ মোশাররফ হোসেন। এ সময় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাংকের এমডি বলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১৯ বছর বয়সে ৪০ বছরের অর্জন করেছে। দেশের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর বয়স এখন প্রায় ৪০ বছর হতে চলেছে। কিন্তু অনেক প্রথম প্রজন্মের ব্যাংককে পেরিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংক চতুর্থ স্থান দখল করেছে। এ জন্য তিনি ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, পরিচালক, কর্মকর্তা কর্মচারী ও গ্রাহকদের অবদানের কথা স্মরণ করেছেন।
১৯৯৯ সালের ২ জুন মার্কেন্টাইল ব্যাংক তৃতীয় প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত ১২৯টি শাখা নিয়ে ব্যাংকটির আমানত দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আর ঋণ বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

আরো পড়ুন :
দুদকের ভূমিকায় হতাশ ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের ভূমিকা দেখে লজ্জায় কালো কাপড়ে মুখ ঢাকতে চান হাইকোর্ট। ওই ঋণ কেলেঙ্কারির মামলার আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানিকালে গতকাল বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
আদালত বলেছেন, আমরা আদেশ দিচ্ছি। অনেক কথা বলছি। কিন্তু সে অনুযায়ী কিছুই হচ্ছে না। এখন আমাদের মনে হচ্ছে কেন এই কথাগুলো বলেছি। উলু বনে মুক্তা ছড়ানোর মতো হচ্ছে। দুদকের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে লজ্জায় কালো কাপড়ে মুখ ঢাকি। রাষ্ট্রের এত বড় প্রতিষ্ঠান যদি কিছু লোকের কাছে মাথানত করে তাহলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে লাভ কী?

এ সময় এ ঘটনায় করা ৫৬টি মামলার ৮ জন তদন্ত কর্মকর্তা ও ২ জন তদারকি কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত শুনানি গ্রহণ শেষে ব্যাংকটির সাবেক ডিএমডি ফজলুস সোবাহানের ৬টি ও একটি ব্রাঞ্চের সাবেক ব্যবস্থাপক শিফার আহমেদের একটি জামিন আবেদনের ওপর আজ বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য রেখেছেন।

জানা যায়, বেসিক ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় ৫৬টি মামলা করে দুদক। আইনে আছে মামলাগুলো দায়েরের ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। কিন্তু দায়েরের পর দীর্ঘ আড়াই বছর পার হলেও তদন্ত শেষ হয়নি। এ ছাড়া ৫৬টি মামলা হলেও একটি মামলাতেও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু এবং পরিচালনা পর্ষদের (বোর্ড মেম্বরদের) কাউকে আসামি করা হয়নি। অথচ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ থেকেই ওই সব ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। এ কারণে বার বারই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন উচ্চ আদালত। গত বছরের ২৬ জুলাই এক আদেশে হাইকোর্ট ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় উষ্মা প্রকাশ করেন দেশের উচ্চ আদালত। একপর্যায়ে গত ২৩ মে ৫৬টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেই ৩০ মে বুধবার তলব করেন হাইকোর্ট।

শুনানির শুরুতে এ ঘটনায় দায়ের করা ৪৮টি মামলার আসামি ফজলুস সোবাহানের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটাই অভিযোগ যে আমি ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের ঋণ যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। কিন্তু আমি তো নেতিবাচক মন্তব্যগুলো হাইলাইট করে পাঠিয়ে দিয়েছি। ঋণ প্রদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো বোর্ড নিয়েছে।
এরপর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ব্যাংকের রুলস রেগুলেশন লঙ্ঘন করে ঋণ দিয়েছে। কেউই ধুয়া তুলসী পাতা নয়। একপর্যায়ে আদালত বলেন, সবাই লুটপাট করে খেয়েছে, কিন্তু চার্জশিট হচ্ছে না কেন? এ ধরনের মামলায় যদি আড়াই বছর লেগে যায়। দুদকের আইনজীবী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাদের তলব করে আদেশ দেয়ার পর সবার সাথে বসে কথা বলে দেখেছি এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো গাফিলতি নেই।

আদালত বলেন, আপনি সবার দায়িত্ব নিচ্ছেন। তা হলে পরিচালনা বোর্ডের কাউকে আসামি করেননি কেন? মামলার এফআইআর দেখেন ঋণ বাছাই কমিটি নেতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছে। ম্যানেজার না হয় ম্যানেজ হয়ে ঋণ প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ঋণ বাছাই কমিটি নেতিবচাক করে পাঠালেও সেটা বোর্ডে উত্থাপিত হয়েছে এবং বোর্ড ঋণের অনুমতি দিয়েছে। তা হলে এখনো বোর্ডের একজনও আসামি হলো না কেন? এখনও তদন্ত কেন শেষ হলো না?

দুদক আইনজীবী বলেন, দুদক কিন্তু বসে নই। আজ সকালেও সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। বোর্ড মেম্বারদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের নিজেরও একটা রিপোর্ট আছে। এখন তদন্ত শেষ পর্যায়ে।

আদালত বলেন, একজন ব্যক্তিকে কতবার জিজ্ঞেস করতে হয়? আদৌ জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে? বোর্ড মিটিং হয়েছে কী হয়নি? আপনার চেয়ারম্যান বলেছেন, টাকাটা কোথায় গেল আগে খুঁজতে হবে। তারপর চার্জশিট হবে। এটা কী মানিলন্ডারিং মামলা যে টাকার উৎস খোঁজা প্রয়োজন? বিচ অব ট্রাস্ট হয়েছে কী হয়নি, টাকা আত্মসাৎ হয়েছে কী হয়নি-সেটা দেখতে হবে। মামলাটা ফ্রিজে পাঠাতে এ বক্তব্য একটা ডিভাইস।

আদালত এ সময় আরো জানতে চান, শিফার আহমেদ তদন্তের সময় তো লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। তারপরও কেন চেয়ারম্যানসহ বোর্ড মেম্বাররা আসামি হননি? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টের পর আর কী লাগে? এরপর আদালত দুদকের একজন তদারকি কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেনের বক্তব্য শোনেন। ইকবাল হোসেন বলেন, বোর্ডের সব সদস্যের বক্তব্য নেয়া শেষ হয়েছে। আজ (গতকাল বুধবার) সাবেক চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিয়েছি। অন্যান্য আসামির বক্তব্যের সাথে তাদের বক্তব্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে।

আদালত তার কাছে জানতে চান, টাকা কোথায় গেল তার উৎস খোঁজার প্রয়োজন মনে করেন কি? জবাবে তিনি বলেন, ক্যাশ টাকা উত্তোলন করেছে। উৎস খোঁজা সম্ভব নয়।

আদালত বলেন, বুঝি না আপনার চেয়ারম্যান বুঝে বলে নাকি না বুঝে বলে। আপনাদের কথাবার্তায় আমরা খুবই হতাশ। একপর্যায়ে দুদকের আইনজীবী এম এ আজিজ খান দাঁড়িয়ে বলেন, আসামিরা খুবই ক্ষমতাধর। আদালতের আদেশের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছে। প্রয়োজেনে আদেশ দেন।
আদালত বলেন, আমরা আদেশ দিলেও তো কাজ হচ্ছে না। এরপর ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ দাঁড়িয়ে ফজলুস সোবাহানের জামিন চান। এক পর্যায়ে আদালত জানতে চান কতটিতে জামিন বাকি আছে। জবাবে ১৫টি জানালে আদালত বলেন, এর মধ্যে কতটি ৫০ কোটি টাকার নিচের মামলা। আইনজীবীরা বলেন, ৬টি। এ ছাড়া শেফার আহমেদের ৫৯ কোটি টাকার একটি মামলায় জামিন আবেদনের ওপর আজ বৃহস্পতিবার আদেশ প্রদানের জন্য দিন ধার্য করেন।

উল্লেখ্য, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালের ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ১৫৬ জনকে আসামি করে মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় ৫৬টি মামলা করে দুদক। ১৫৬ জন আসামির মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে ৪৮টি, ডিএমডি ফজলুস সোবহানকে ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থকে ২৩টি এবং ডিএমডি এ মোনায়েম খানকে ৩৫টি মামলায় আসামি করে দুদক। পরে আরো মামলা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement