২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের জবাবদিহির সময় এসেছে

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ভবন - ছবি : সংগৃহীত

রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধনের লক্ষে চালানো গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের জবাবদিহি করার সময় এসেছে। মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানী শুরু হচ্ছে। চলবে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত।

ক্ষমতাসীন এনডিএ দলের নেতা নোবেল জয়ী অং সান সু চি স্বয়ং এ মামলায় মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এর মধ্য দিয়ে এই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা ইস্যুতে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য মিয়ানমার কোনো আদালতে দাড়াচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ববাসীকে নিজেদের অবস্থান জানানোর ক্ষেত্রে এটিকে একটি সুযোগ হিসাবে বিবেচনা করছে মিয়ানমার।

এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) এখতিয়ার অস্বীকার করছে। মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার এবং জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান দলকে মিয়ানমারে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তি করেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি প্রতিবেশী দেশটি। কিন্তু আইসিজে সনদে স্বাক্ষরকারী হিসাবে আন্তর্জাতিক এই আদালতকে অস্বীকার করতে পারেনি দেশটি।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন সোমবার নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলেছেন, আইসিজের প্রক্রিয়াকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। এতে যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তা নয়। মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যেখানে যে সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে।

তিনি বলেন, গাম্বিয়ার করা মামলার সুরাহা হতে চার থেকে ছয় বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আমরা চাই এই মামলার মাধ্যমে রাখাইনের ঘটনার সত্যতা উদঘাটিত হোক এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে মিয়ানমার জবাবদিহি করতে বাধ্য হোক।

আইসিজের রায় মানতে মিয়ানমার বাধ্য কিনা জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, বাস্তবিক অর্থে রায় মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রায় বিপক্ষে গেলে মিয়ানমার তা না মেনে পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র অস্বীকৃতি জানালে আইসিজের রায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব পরবে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ওপর। চীন বা রাশিয়া এক্ষেত্রে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করবে কিনা তা দেখার বিষয়। এছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের বিষয়টি গেলে তা দীর্ঘসুত্রতার মধ্যে পরতে পারে। রায়ে মিয়ানমারের গণহত্যার বিষয়টি উঠে আসলে কি করতে হবে তা নিয়েও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতে পারে। তিনি বলেন, মিয়ানমার কয়েকটি দেশকে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে জাতিগত নিধনের মত অপরাধ থেকে দায়মুক্তি পেয়ে যাওয়া চেষ্টা করছে। মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ কার্যকর সব পদক্ষেপ এখনই নেয়া প্রয়োজন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আদালতে দায়ের করা মামলাগুলোতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।

নেদারল্যান্ডসের পিস প্যালেসে অবস্থিত আইসিজেতে আজ গাম্বিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানি শুরু হবে। ১১ ডিসেম্বর বক্তব্য উপস্থাপন করবে মিয়ানমার। ১২ ডিসেম্বর সকালে গাম্বিয়া পাল্টা যুক্তি দেবে মিয়ানমারের বিপক্ষে। আর দুপুরে মিয়ানমার গাম্বিয়ার জবাব দেবে।

গণহত্যার অপরাধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সিদ্ধান্তে গাম্বিয়া এই মামলা করেছে। মামলা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ ও কানাডা। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে নেদারল্যান্ডসে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। মিয়ানমারবিষয়ক কানাডার বিশেষ দূত বব রায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলও নেদারল্যান্ডসে রয়েছে।

শুনানীতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার জাতিসঙ্ঘের গণহত্যা সনদ ভঙ্গ হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে যাতে বিরত থাকে একং মামলার সাথে সম্পর্কিত সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আলামত যাতে ধ্বংস না করে সে জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাইবে গাম্বিয়া।

আইসিজেতে মামলা লড়াইয়ের জন্য গাম্বিয়া খুব শক্তিশালী একটি আইনজীবী দল গঠন করেছে। গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির বিচারমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবু বকর তামবাডু। তিনি রুয়ান্ডার গণহত্যা সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ছিলেন। তামবাডুর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে অভিজ্ঞ ও সুপরিচিত আন্তর্জাতিক আইনজীবীরা রয়েছেন। আইসিজে এবং গণহত্যা কনভেনশনের ক্ষেত্রে তাদের প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে গণহত্যা মামলার শুনানি চলাকালে নেদারল্যান্ডসে বেশ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশসহ ওআইসির সদস্য কয়েকটি দেশ এবং একাধিক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এসব আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নেদারল্যান্ডসে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়েছে। আজ রাতে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রীর সম্মানে ওআইসির চার সদস্যদেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। আইসিজেতে গাম্বিয়ার মামলা প্রক্রিয়ায় ওআইসির সমর্থনের বিয়ষটি তুলে ধরতে এই আয়োজন করা হয়েছে।

মিয়ানমারকে বর্জনের আহ্বান : আইসিজের শুনানীকে সামনে রেখে মিয়ানমারকে বর্জনের ডাক দিয়েছে ১০টি দেশের ৩০ টি মানবাধিকার, শিক্ষাবিদ এবং পেশাদারদের সংগঠন। এতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘বয়কট মিয়ানমার ডট অর্গ’ চালু করেছে ‘বয়কট মিয়ানমার ক্যাম্পেইন’। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন, ফরসি ডট কো, রেস্টলেস বিংস, ডেস্টিনেশন জাস্টিস, রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক অব কানাডা, রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ অব ইন্ডিয়া ও এশিয়া সেন্টার। এ নিয়ে বয়কট মিয়ানমার ডট অর্গ সোমবার লন্ডন থেকে তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন

সকল