সৌদি ফেরত শ্রমিকদের নিয়ে নতুন ব্যবসার ফাঁদ!
- মনির হোসেন
- ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:২১
সৌদি আরবে পুুলিশি অভিযানে ধরা পড়া ৯৬ বাংলাদেশী শ্রমিককে কারাগার থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত বুধবার রাতে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে তারা ফিরে আসেন। প্রায়ই দেশটি থেকে শ্রমিকরা নিঃস্ব হয়ে ফেরার ঘটনায় জনশক্তি রফতানির সাথে জড়িতরা উদ্বিগ্ন। এ দিকে দেশে ফেরত আসার পর বিমানবন্দর অভিবাসন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে তথ্য দেয়ার পরও একাধিক এনজিওর দফায় দফায় নাম-ঠিকানা ও ফেরত আসার কারণ জানাতে চাওয়ায় অনেকটা হাঁপিয়ে উঠছেন অসহায় নারী ও পুরুষ কর্মীরা। এরপর দফায় দফায় চলে তাদের নিয়ে টানাহেঁচড়া। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফিরে আসা শ্রমিকদের মধ্যে কারো কারো অভিযোগ, তাদের নিয়ে ঢাকার বিমানবন্দরে কেউ কেউ নতুন ব্যবসার ফাঁদ পাতার চেষ্টা করছেন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সে ৯৬ জন শ্রমিক হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আউট পাসে ফেরা শ্রমিকদের ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তারা জবানবন্দী নিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে। এরপরই আবার এনজিওদের কাছে দিতে হচ্ছে হরেক রকম তথ্য।
শ্রমিকরা জানান, ইমিগ্রেশনের জিজ্ঞাসাবাদে কোন শ্রমিক কোন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কত টাকা দিয়ে গেছেন, সৌদি আরবে কত দিন অবস্থানের পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে যেতে হয়েছে এবং কত দিন কারাগারে থেকে আউট পাসে দেশে ফিরতে হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হচ্ছে। এরপর সেখান থেকে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় দফায় তথ্য দিতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা বলেন, এরপর আবারো এনজিওগুলো তাদের ঘিরে ধরে নতুন করে দেশে ফেরার তথ্য, স্বজনদের মোবাইল নাম্বার, ঠিকানা, কবে গেলাম, কিভাবে ধরা পড়লাম এমন সব প্রশ্ন করে এক রকম টানাহেঁচড়া শুরু করে। এ সময় যাদের আত্মীয়স্বজন বিমানবন্দরে থাকে না তাদের আরো বেশি সমস্যা হচ্ছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, এসব জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কোনো উপকার হচ্ছে না।
গতকাল ফিরে আসা একাধিক শ্রমিক নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব গেলাম। নিজ চোখে পরিস্থিতি দেখে এলাম। এখন যদি আমি দেশে না-ও খেয়ে থাকি তারপরও আর কোনো দিন বিদেশে যাওয়ার নাম নেব না।
এর আগে সৌদি আরবের শেল্টার হোম থেকে দেশে ফেরা কল্পনা আক্তার নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমানবন্দরে যেভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে তথ্য আদায় করা হয় এটা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগেনি। কল্পনা আক্তারের মতো ফেরত আসা শ্রমিকরা নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমানবন্দরে যেসব শ্রমিক ফেরত আসছে তাদের দ্রুত বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক তানভীর হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের কাজ হলো শ্রমিকদের বিমানবন্দরে রিসিভ করা এবং তাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। সেটিই করছি। সাথে ফিরে আসার কারণ জেনে সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছি। আর যেসব শ্রমিক স্মার্ট কার্ড ছাড়া বিমানবন্দর ত্যাগ করার চেষ্টা করছে তাদের নজরদারি করে অফলোড করা হচ্ছে। একাধিক এনজিও সংস্থার দফায় দফায় শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শ্রমিকদের জন্য যা করণীয় সব ব্যবস্থা করছি। এরপরও কেউ যদি বিমানবন্দরের বাইরে সেধে সেধে খাওয়াতে চায় তাহলে আমি কি তাদের বাধা দিতে পারি?
গতকাল বায়রার একজন সদস্য নয়া দিগন্তকে বলেন, যেভাবে সৌদি থেকে শ্রমিকরা ফিরছে এতে আমাদের শ্রমবাজার মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছে। আমাদের মনে হচ্ছে এনজিওগুলো গভীর চক্রান্ত শুরু করেছে। এখন নতুন নতুন কিছু এনজিও ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে ফিরে আসা শ্রমিকদের একতরফা বক্তব্য নিয়ে পরে আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। তাদের সাথে বনিবনা না হলেই তখন তারা লিখিত আকারে শ্রমিকদের দিয়ে অভিযোগ জমা দিচ্ছে জনশক্তি ব্যুরোতে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বেশ কিছু দিন আগে একটি মেয়ে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন। একটি এনজিও বিমানবন্দর থেকেই ওই মেয়েটিকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখতে পান মেয়েটি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা; কিন্তু মেয়েটি পাসপোর্টের রেকর্ড অনুযায়ী বিদেশে গিয়েছে পাঁচ মাস হলো। তাহলে এখন মেয়েটির সমস্যা তৈরি হয়েছে কোথায়? পরে এটি মীমাংসা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তো মেয়েদের নিয়ম মেনেই পাঠাচ্ছি। সৌদি আরবে যাওয়ার পর মেয়েরা নির্যাতিত হচ্ছে না সেই কথা আমি বলব না। তবে যৌন নির্যাতনের চেয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতিত বেশি হচ্ছে স্বীকার করে বলেন, এটা আমাদের সরকারের দেখা উচিত; কিন্তু দেখা যাচ্ছে পাঠানোর পর সব দোষ আমাদের ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা