২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
প্রতিনিধিদল যাচ্ছে মালয়েশিয়া

সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় না দিতে মাহাথির সরকারকে অনুরোধ

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ - সংগৃহীত

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় যোগ দিতে আজ সোমবার মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। ৬ নভেম্বর দেশটির প্রশাসনিক কেন্দ্রস্থল পুত্রাজায়ায় মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলসেগারানের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা। রাজধানী কুুয়ালালামপুর থেকে প্রতিনিধিদলের সাথে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ. শহীদুল ইসলাম এবং কাউন্সেলর (শ্রম) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম যোগ দেবেন।

দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলছেন, বৈঠকে স্থগিত শ্রমবাজার খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে গতবারের চিহ্নিত সিন্ডিকেট সদস্যরা শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে জোর অপতৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে শ্রমবাজার না খুলে বরং হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বায়রার সদস্যরা মনে করছেন। তাদের দাবি একটাই, মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এবার যেন কোনোভাবেই কোনো সিন্ডিকেটকে আর প্রশ্রয় না দিয়ে শ্রমবাজারটি সবার জন্য উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেন।

এ দিকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) থেকে দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীসহ দু’জন মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, এবার যাতে কোনোভাবেই অনলাইন সিস্টেম কোম্পানি বেস্টিনেট শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করতে না পারে সেটি বিবেচনা করার জন্য একই সাথে চিঠিতে কিছু পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বায়রা সংশ্লিষ্ট একজন নেতা নয়া দিগন্তকে বলেন, বায়রার সাধারণ সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই মালয়েশিয়ার দু’জন মন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু চিঠি দেয়ার পর সিন্ডিকেশনের হোতা হিসাবে চিহ্নিত দু’জন সদস্য সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ঘোলা করতে নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। একই সাথে তারা দুই দেশের সরকারকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। জনশক্তি রফতানির সাথে সম্পৃক্ত একজন ব্যবসায়ী ও সাবেক বায়রা নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, গত বছর সিন্ডিকেট করে ব্যবসা চালুর কারনে মালয়েশিয়া সরকার কর্মী নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।

এবার কোনো সিন্ডিকেট হবে না- এই শর্তেই কিন্তু কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় শ্রমবাজারটি খোলার উদ্যোগ নেয়া হয়; যা আলোচনার টেবিল থেকে এখন অনেকটা চূড়ান্ত অবস্থায় আছে। কিন্তু দুই দেশের কতিপয় দুষ্টচক্র আবারো কিন্তু সিন্ডিকেট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে জানতে চান, মালয়েশিয়া সরকার কিভাবে জানবে, আমি সিন্ডিকেট চাই না? সে ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ান গভর্মেন্টকে হয় লিখিতভাবে বলতে হবে অথবা মিটিংয়ে বলতে হবে। কারণ মাইগ্রেশন কস্ট হাই, অনেক কন্ট্রভারসিয়াল বিষয়ও আছে। সেসব কারণেই আমরা সিন্ডিকেট আর চাই না। এ কথাটা যারা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিংয়ে যাচ্ছেন তারা সেখানে একথা বলবেন কি না? এটার নিশ্চয়তা কী? এটার একটা কমিটমেন্ট দরকার। ‘ওনি’ আসলে এখানে যা বলছেন ওই জায়গায় (মালয়েশিয়া) গিয়ে যে আবার বলবেন বা পরে যে বলবেন তারা চাপিয়ে দিয়েছে, আমি কী করব? তার মানেটা কী? এখন উনি যা বলছেন সেটি আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষে, দেশের পক্ষে বলছেন। কিন্তু আমার এই গ্যারান্টিটা দরকার উনি যা বলতেছেন সেটি মন থেকেই বলছেন? উনি নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ ও সৎ মানুষ। সব দিক থেকেই ক্যাপাবল। তবে আমার একটু ভয় হচ্ছে। কারণ তিনি মাঝে মধ্যে বলেন, সবার জন্য শ্রমবাজার ওপেন হয়ে যাক। আবার বলছেন, যদি টাকা কম নেয়, তা হলে আমি সিন্ডিকেটকে সমর্থন করব। এত সহজ না? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে দু’টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এক সিন্ডিকেট হবে না। দুই মাইগ্রেশন কস্ট কমবে। এই দুটোই এখন আমাদের দরকার। গতবার যেভাবেই হোক মার্কেটটা ওপেন হয়েছিল। কিন্তু যে লোকটা ওখানে (মালয়েশিয়া) বসে আছে বাঙালি, সে যে এত চতুর সেটা আমার জীবনে আমি কখনো দেখিনি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবার বায়রা মালয়েশিয়া সরকারকে যে চিঠি দিয়েছে সেটি এক অর্থে ঘটকের দায়িত্ব পালন করতেছে। এখানে মাইন্ড করার কিছু নেই। বায়রা তো মালয়েশিয়া সরকারকে বলেনি ১০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে শ্রমবাজারের দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হোক? বায়রা তো বলেনি এবার ২০ জনকে দেয়া হোক। বায়রা শুধু বলেছে গতবারের সিন্ডিকেটের গদফাদার দাতো আমিনের বেস্টিনেট কোম্পানিকে যাতে বাদ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে বায়রা থেকে চিঠি দেয়ায় মালয়েশিয়া সরকার বিস্মিত। এমন কথা চাউর আছে মার্কেটে। এক প্রশ্নের জবাবে এ ব্যবসায়ী বলেন, এটি একটা হাই-পথিটিক্যাল শব্দ। বরং আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি বায়রা থেকে যে চিঠি গেছে সেটাতে মালয়েশিয়া সরকার খুশি হয়েছে। তারা সতর্ক হয়েছে। ‘উনি’ বলতে আপনি কাকে বোঝাচ্ছেনÑ ‘এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই ব্যবসায়ী বলেন, এটি আমাদের সেক্টরের যারা বোঝার তারা ঠিকই বুঝবেন।’

গতকাল রোববার রাতে মালয়েশিয়াগামী প্রতিনিধিদলের দলনেতা ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেয়ার চেষ্টার পরও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইলের রিং বাজার পরও তিনি রিসিভ না করে কেটে দেন।

উল্লেখ্য ২০১৬ সালের মার্চ মাসে জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে শ্রমবাজার খোলা হয়। নাজিব রাজাক সরকারের পতন হলে মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। তিনি ১০ সিন্ডিকেটের হোতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দাতো আমিন নুরের অনলাইন সিস্টেম (এসপিপিএ) বাতিল করে বিদেশী কর্মী আমদানির ওপর নিধেষাজ্ঞা জারি করেন। একই সাথে তিনি ঘোষণা দেন, কোনো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় আর বিদেশী শ্রমিক আসতে পারবে না। এর পরও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য অব্যাহত রয়েছে। এ দিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে কোনো আলোচনা না করেই মালয়েশিয়ার মন্ত্রীদের চিঠি দেয়ায় শনিবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বায়রার কাছে লিখিত ব্যাখা চাওয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement