২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ

- সংগৃহীত

জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া রোধে সচেতনতা সৃষ্টি’ বিষয়ক রেজুলেশন গ্রহণের ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত এই রেজুলেশন গৃহীত হলে তা সদস্য দেশসমূহ ও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এ বিপর্যয় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ।

শনিবার জাতিসংঘের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ’ বিষয়ক গ্রুপ অব ফ্রেন্ডস্ এর এক সভায় সভাপতিত্বকালে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

সভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও লন্ডন ভিত্তিক রয়াল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন (আরএনএলআই) সহ জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহের ১৩ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে ২০১৭ সালে জাতিসংঘের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ’ বিষয়ক গ্রুপ অব ফ্রেন্ডস্ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে বাংলাদেশের নেতৃত্বে এই গ্রুপটি গঠনে এগিয়ে আসে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আয়ারল্যান্ড, ফিজি ও তানজানিয়া। সংগঠনটি শিশুদের মৃত্যু ও আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ‘আমরা শিশু ও নবজাতকের মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পেরেছি, কিন্তু পানিতে ডুবে মৃত্যুহার যদি শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে না পারি, তাহলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ সহ অন্যান্য বিষয়ে আমাদের সাফল্য এবং এসডিজি-৩ এর অর্জন অসমাপ্ত থেকে যাবে।’

বৈশ্বিক ও প্রতিরোধযোগ্য এই মহামারির বিষয়টি অবশ্যই আন্তর্জাতিক নীতি-নির্ধারণীতে স্থান পেতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পানিতে ডুবে মৃত্যু বিষয়ে বাংলাদেশ যে সকল নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা তুলে ধরেন মাসুদ। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৫ সালে গৃহীত সকল শিশুকে সাঁতার শেখানোর মতো সরকারি সিদ্ধান্ত।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে শিক্ষা, মহিলা ও শিশু, সমাজ কল্যাণ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে বাংলাদেশ যে আন্ত:সরকারি টাস্কফোর্স গঠন করেছে তা উল্লেখ করেন তিনি। এই টাস্কফোর্স পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ বিষয়ক একটি জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করছে যা প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে সভাকে অবহিত করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।

সভায় বক্তারা পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ বিষয়টির গভীর তাৎপর্য উল্লেখ করে বলেন, গত এক দশকে বিশ্বে শিশু, নারী ও পুরুষ মিলে কমপক্ষে ৪০ লাখ মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে। তারা আরও বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে এগিয়ে আসা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে আবশ্যকীয় একটি কাজ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আরএনএলআই এর প্রতিনিধিরা বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর এই সাম্প্রতিক হার আমরা যদি নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনতে পারি তাহলে এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বিশেষ করে শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক অর্জনে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

এই গ্রুপ অব ফেন্ডস্ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলতি ৭৪তম অধিবেশনে উপস্থাপন করার জন্য পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ বিষয়ে একটি খসড়া রেজুলেশন প্রস্তুতের বিষয়ে আলোচনা করেন। গ্রুপটির সদস্যরা ঐতিহাসিক এই পদক্ষেপ গ্রহণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ও নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সূত্র : ইউএনবি।


আরো সংবাদ



premium cement