১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌদি পর্যটন ভিসা পাচ্ছে ৪৯ রাষ্ট্র, তালিকায় নেই বাংলাদেশ

- ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশকে বাদ রেখেই বিশ্বের অন্যান্য ৪৯টি দেশকে পর্যটন ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। সম্প্রতি সৌদি সরকার ভিসা পাওয়ার উপযোগী এমন ৪৯টি দেশের তালিকাও প্রকাশ করেছে। সূত্র অনুযায়ী ভিসা পাওয়ার তালিকায় আরো স্থান পায়নি প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া।

এ দিকে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবের পর্যটন ভিসা পাওয়ার তালিকায় বাংলাদেশ নেইÑ এমন তথ্য তারা এখনো জানে না। তবে হজ ও ওমরাহ ভিসা প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলেও জানায় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ঢাকার হজ অফিসের পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম গতকাল রোববার সকালে নয়া দিগন্তকে জানান, সৌদি সরকারের ভিসাসংক্রান্ত বিষয়টি মূলত বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় দেখভাল করেন। তবে সৌদি সরকার ভিসা বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিষয়টি অবশ্যই আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে।

সৌদি আরবের পর্যটন ভিসার বিষয়ে ঢাকার হজ অফিস এখনো কিছু জানে না বলেও জানান এই কর্মকর্তা। বাংলাদেশী নাগরিকদের হজ ও ওমরাহ ভিসা নিয়ে বেশি কাজ করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
সংগঠনের এক কর্মকতা জানান, সৌদি সরকার বেশ কিছু দেশের নাগরিকদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা (সৌদি ভাষায় জিয়ারা ভিসা) চালু করেছে বলে শুনেছি। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই বলে যে তথ্যটি ইতোমধ্যে চাউর হয়েছে; এটি কতটুকু সত্য সেটির বিষয়েও আমরা যাচাই বাছাই করছি।

এ দিকে হাবের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম মহাসচিব ও বর্তমান নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা মাহবুবুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, শুধু বাংলাদেশ নয়, আমাদের আশপাশের আরো কয়েকটি দেশকে বাদ দিয়েই সৌদি আরব ট্যুরিস্ট ভিসা পাবে এমন বেশ কিছু দেশের তালিকা তৈরি করেছে। বাদ পড়াদের তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও মুসলিমপ্রধান ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের নাম রয়েছে। বাদের তালিকায় রয়েছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতও। কেন এসব দেশকে ভিসা প্রাপ্তির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলো সেটির একটি কারণও সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পেয়েছেন হাবের এই নেতা।

তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক হাজী হজ ও ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে যান। সারা বছরেই এসব দেশের নাগরিকেরা ওমরাহ ভিসার সুযোগ নিয়ে দেশটি ভ্রমণেরও হরহামেশাই সুযোগ পান। কিন্তু নতুন তালিকায় যেসব দেশের নাম দেখা যাচ্ছে সেসব দেশের নাগরিকেরা খুবই কম সংখ্যায় সৌদিতে যাচ্ছেন। তাই ওই সব দেশের নাগরিকদের সৌদি ভ্রমণে উদ্ধুদ্ধ করতে এবং সৌদি আরবের ব্যবসা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবেই তারা এখন নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এ দিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আনিছুর রহমান রোববার সকালে নয়া দিগন্তকে জানান, সৌদি সরকারের ট্যুরিস্ট ভিসার তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই এমন তথ্য এখনো আমরা জানি না। ধর্ম সচিব আরো জানান, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এই ট্যুরিস্ট ভিসার প্রয়োজনই হবে না। কেননা আমরা তো প্রতি বছরই ওমরাহ ও হজের ভিসা পাচ্ছি। তাই সৌদি সরকারের নতুন এই উদ্যোগ হয়তো নতুন নতুন দেশের জন্য প্রয়োজন হবে। আর আমরা তো এই সুযোগ আগে থেকেই পাচ্ছি।

উল্লেখ্য, ভিশন ২০৩০ সালকে টার্গেট করে সৌদি আরব বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে তাদের অন্যতম পরিকল্পনা হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে সৌদি আরবের পর্যটনের প্রতি আকৃষ্ট করা।
সৌদি সরকারের একটি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সাথে সম্প্রতি দুই হাজার ৭০০ কোটি ডলারের ভ্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সৌদি আরব। আগে বিদেশীদের সৌদি ভ্রমণে কিছুটা বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু তেল খাতের ব্যবসা থেকে বের হয়ে ভ্রমণ খাতে ব্যবসায়িক উন্নয়ন করার চেষ্টা করছে সৌদি সরকার। তাই ভ্রমণের জন্য দেশের দরজা খুলে দিয়েছে দেশটি। বিশ্বের ভিন্ন জায়গার সৌদি কনস্যুলেটের মাধ্যম ভ্রমণ ভিসা পাবে বিদেশীরা। এ ছাড়া ই-ভিসার সুবিধাও রয়েছে।

সূত্র মতে, সৌদি সরকার ঘোষিত যে ৪৯টি দেশ ভ্রমণ ভিসা পাওয়ার সুবিধা পাচ্ছে সেগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, কাজাখিস্তান, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, স্পেন, বেলজিয়াম, মালয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া, সাইপ্রাস, ব্রিটেন, ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্ডোরা,ডেনমার্ক, জার্মানি, বুলগেরিয়া, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, হল্যান্ড, ইতালি, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লিথুনিয়া, গ্রিস, লিচেনস্টাইন, মোনাকো, আইসল্যান্ড, মাল্টা, পোল্যান্ড, লাটভিয়া, নরওয়ে, রাশিয়া, লুক্সেমবার্গ, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া, মন্টেনিগ্রো, স্লোভাকিয়া, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, সান মারিনো, ইউক্রেন ও চীন। চীনের সাথে রয়েছে হংকং, ম্যাকাউ ও তাইওয়ান।

উল্লেখ্য, ৯০ দিন অর্থাৎ তিন মাসের জন্য এই ভিসায় সৌদিতে থাকার অনুমতি পাবে পর্যটকরা। একাধিকবার যাতায়াত করার জন্য এই ভিসা এক বছরের জন্য বৈধ থাকবে। ভিসার দাম পড়বে ৪৪০ রিয়াল। সাথে ভ্যাট যুক্ত হবে। ই-ভিসার মাধ্যমেও পর্যটকেরা আবেদন করতে পারবে।


আরো সংবাদ



premium cement