২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাহরাইনি ইমাম খুনের জের

অর্ধশতাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিনকে দেশে ফেরত : অপেক্ষায় আরো দুই শতাধিক

বাহরাইনি ইমাম আবদুল জলিল
বাহরাইনি ইমাম আবদুল জলিল - ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ বাহরাইনের বিভিন্ন মসজিদে ইমাম ও মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োজিত বাংলাদেশীদের দেশে ফেরত পাঠানো শুরু হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশী এক মুয়াজ্জিনের হাতে বাহরাইনের এক ইমাম নৃসংশভাবে খুনের ঘটনার জেরেই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রবাসী বাংলাদেশী ও বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এখনই বাহরাইন সরকারের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা শুরু করতে না পারলে দেশটিতে পরিবার নিয়ে কর্মরত আরো দুই শতাধিক ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে শিগগিরই ফেরত পাঠানো হতে পারে।

বাহরাইনে বাংলা পত্রিকার সাংবাদিক নোমান তৌহিদ গতকাল শনিবার নয়া দিগন্তকে বলেন, বাহরাইনের বিভিন্ন মসজিদে ২৫০ জনেরও বেশি বাংলাদেশী ইমাম ও মুয়াজ্জিন কর্মরত রয়েছেন। তারা ১৯৮০ সাল থেকেই অত্যন্ত সুনামের সাথে দেশটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যার কারণে বাহরাইন সরকারও তাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে। কিন্তু ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট হঠাৎ একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পরই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। তিনি বলেন, একটি মসজিদে (এলাকার নাম জানাতে পারেননি) কর্মরত বাহরাইনি ইমাম আবদুল জলিলকে একই মসজিদের বাংলাদেশী মুয়াজ্জিন কামাল উদ্দিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ তিন টুকরো করে ফেলে। কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটি না জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার পরই পুলিশ মুয়াজ্জিন কামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করে। ২৭ জুলাই কামাল উদ্দিনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হয় বলেও জানান তিনি।

এ ঘটনার সত্যতা এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের করণীয় সম্পর্কে জানতে গতকাল বিকেলে বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) তাওহিদুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসলে আমাদের জানা মতে বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে বাহরাইন থেকে কী কারণে ফেরত পাঠানো হচ্ছে সেটি আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

বাহরাইনে বাংলাদেশী ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সংগঠন ‘ওয়াকাফ’ মনে করছে, গত বছর মসজিদের ভেতরে বাহরাইনি ইমাম আবদুল জলিলকে খুনের ঘটনায় দেশটির সরকার এমন আচরণ করছে।

সাংবাদিক নোমান তৌহিদ আরো জানান, বর্তমানে দেশটিতে কর্মরত একাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আসলে কী অপরাধে বাহরাইন সরকার তাদের ফেরত পাঠানো শুরু করেছে সেটি তারাও ঠিকভাবে বুঝতে পারছেন না। ইতোমধ্যে ৬০ জনেরও বেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশীদের দাবি- এই বিষয়টি নিয়ে যেন বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিকভাবে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এ ঘটনার পর অদ্যাবধি তেমন কোনো অগ্রগতি তারা দেখতে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বাংলাদেশী ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের।

এ দিকে বাহরাইনে বসবাসরত একাধিক ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে আগেই বলেছিলেন, ইমাম খুনের ঘটনার পর থেকেই বাহরাইন সরকার বাংলাদেশীদের নামে সব ধরনের ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement