২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাগদাদে দূতাবাসের আশ্রয়ে ৪৫ শ্রমিক, স্বজনদের স্বস্তি

বাগদাদে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশী শ্রমিকেরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের কারাদা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে (গুদাম) জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হওয়া ৪৫ বাংলাদেশী শ্রমিককে অবশেষে উদ্ধার করে বাংলাদেশ দূতাবাসের আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ। 
এর আগে এসব কর্মীকে দূতাবাস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উদ্ধার করে পুলিশ বাগদাদের একটি আদালতে প্রেরণ করে। আদালতে প্রত্যেক শ্রমিকের জবানবন্দী নিয়ে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় তাদের পুনরায় বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়। এ দিকে দিনের পর দিন শ্রমিকরা জিম্মি হয়ে থাকায় দেশে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। শ্রমিকদের মুুক্তি পাওয়ার খবর দ্রুত তাদের স্বজনরা জানানোর পর ফিরে আসে স্বস্তি।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ইরাক থেকে বাংলাদেশ কমিউনিটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস নয়া দিগন্তকে বলেন, ৪৫ শ্রমিককে আদালতে পাঠানোর পর তাদের সবার জবানবন্দী রেকর্ড করেন আদালত। এর কারণে অনেক সময় লেগে যায়। পরে তাদের দূতাবাসে এনে থাকা এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) রেজাউল কবিরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এসব শ্রমিককে দ্রুত উদ্ধার করা হয়েছে। এখন দূতাবাসে রেখেই তাদের সবার আকামা তৈরি ও কোম্পানিতে কাজে যোগদান করানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা ইয়াসিন, মো: বিকো হোসেন (বাসার), সাব্বির, টিটন, জাফর এবং দূতাবাসের প্রথম সচিব ইমরান আহমদ এসব শ্রমিককে উদ্ধারে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। সারাক্ষণ দৌড়ঝাঁপ করেছেন।

তিনি কমিউনিটির পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইরাকে বিদেশী শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে কমপক্ষে ২০ লাখের মতো। এরমধ্যে সবকিছু ঠিক থাকলে কমপক্ষে ৫ লাখ শ্রমিকই বাংলাদেশ থেকে আসতে পারবে। আমরা চাই না কিছু মানুষের সুযোগ সুবিধার জন্য সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটি নষ্ট হয়ে যাক। বরং আমরা কমিউনিটির পক্ষ থেকে আরো যেসব এলাকায় বাংলাদেশী শ্রমিকরা জিম্মি রয়েছে, সেগুলোও দূতাবাসের সহায়তায় খুঁজে বের করে তাদেরও উদ্ধার করে কাজে যোগদান করানোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব। যেমনটি এই ৪৫ শ্রমিককে উদ্ধারের পর আমরা উকিল নিয়োগ করেছিলাম। 

শ্রমিকদের ‘ডাক্তার লিটন’ নামের যে ব্যক্তি জিম্মি করে রেখেছিলেন তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা কুদ্দুস বলেন, এখন বিষয়টি কিভাবে সহজে মীমাংসা করা যায় সেটি নিয়ে আমরা কমিউনিটির নেতারা বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। 
এ দিকে কারাদা এলাকার অপর একটি বাড়িতে ৪ মাস ধরে আটকে থাকা ১৬৫ শ্রমিকের পাসপোর্ট জটিলতার অবসান এখনো হয়নি। এরমধ্যে কাপাসিয়া ও পলাশ ওভারসিস নামক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানো ১১ জন রয়েছেন। বাকি শ্রমিকরা কোন কোন এজেন্সি থেকে গেছেন সে ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। 

গতকাল ওই জিম্মিদশা থেকে নয়া দিগন্তকে একাধিক শ্রমিক জানান, দূতাবাসের কর্মকর্তারা এসে তাদের বলে গেছেন এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের পাসপোর্ট জটিলতার অবসান হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কেউ পাসপোর্ট হাতে পাননি। তাদের দাবি শুধু পাসপোর্ট উদ্ধার করে দিলেই হবে। কাজ তারা যার যারটা খুঁজে নেবেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফ্লাইটে এসব শ্রমিক জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর স্মাার্টকার্ড নিয়ে ইরাকে কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। কিন্তু যাওয়ার পর রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের কাছে ‘পাওনা’ রয়েছে দাবি করে শ্রমিকদের একটি ফ্ল্যাটে আটকে রেখে মুক্তিপণ হিসেবে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত টাকা দাবি করে আসছিলেন ডাক্তার লিটন নামক এক ব্যক্তি। এ নিয়ে দূতাবাস থেকেও অনেকভাবে তৎপরতা চালানো হয়। কিন্তু টাকা ছাড়া কোনোভাবেই শ্রমিকদের ছাড়া হবে না বলে লিটন সাফ জানিয়ে দেন। এ নিয়ে নির্যাতিতদের ছবিসহ নয়া দিগন্তে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপরই ইরাকি পুলিশ নিয়ে দূতাবাসের কর্মকর্তারা ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালান।


আরো সংবাদ



premium cement