১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক যায় ভারতে

ভারতের আজমিরে দরগাতেও যান বহু বাংলাদেশী - সংগৃহীত

ভারতের ব্যুরো অফ ইমিগ্রেশন দপ্তরের হিসাব মতে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক যায় বাংলাদেশ থেকেই। দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৮ সালের এ রিপোর্টটি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে রিপোর্টে মূলত ২০১৭ ও ২০১৮ সালের একটি অংশের তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৭ সালে এক কোটির বেশি বিদেশী পর্যটক ভিসায় ভারত ভ্রমণ করেছে যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।

বিদেশী মুদ্রা বিনিময় থেকে দেশটি আয় করেছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৭৪ কোটি রুপি।

২০১৭ সালে যেসব দেশ থেকে বেশি সংখ্যায় পর্যটক ভারতে গেছে তার শীর্ষে আছে বাংলাদেশ।

রিপোর্ট অনুযায়ী ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫৭ জন বাংলাদেশী পর্যটক ভিসায় ভারতে গেছে যেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সংখ্যা ছিলো ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯১৯ জন।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পর রয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্স।

আর পর্যটন খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের আয় ছিল প্রায় তের বিলিয়ন ডলার যেখানে ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসেই আয় হয়েছে সাড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলারের মতো।

কিন্তু বাংলাদেশী পর্যটক এভাবে বাড়ছে কেনো ভারতে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড: সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলছেন ভারতে বাংলাদেশী পর্যটক ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ ভারতীয় ভিসা নীতি সহজীকরণ এবং নতুন নতুন আকর্ষণীয় জায়গা উন্মুক্ত করে দেয়া।

সৈয়দ রাশিদুল হাসানের মতে যেসব কারণে ভারতে বাংলাদেশী পর্যটক অনেক গুণ বেড়ে গেছে তার মধ্যে আছে :

ভারতের ভিসা সহজলভ্য করা
বাংলাদেশের জেলাশহর পর্যন্ত ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র স্থাপন
কাশ্মীর, লাদাখ কিংবা সিকিমের মতো আকর্ষণীয় জায়গাগুলো পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা
ভারতে টুরিস্টদের জন্য অসংখ্য আকর্ষণীয় জায়গা
বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, মুম্বাই ও কোলকাতায় বাংলাদেশী রোগীদের বেড়ে যাওয়া (রোগীরা এখন মেডিকেল ভিসায় গেলেও পরিবারের অনেকেই ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে তাদের সহায়তা করেন)
ধর্মীয় কাজে (যেমন মুসলমানরা আজমির যান আবার হিন্দুদের অনেকগুলো তীর্থস্থান আছে ভারতে)
পাহাড়-পর্বত ট্রেকিংয়ের প্রতি তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হওয়া
আর বছর জুড়ে ব্যবসায়ীরা ছাড়াও কেনাকাটা করতে অসংখ্য বাংলাদেশী ভারতে যান একা বা পরিবার নিয়ে।
ব্যয় তুলনামূলক কম হওয়ায় ট্রেকিংয়ের জন্যও ভারত যান অনেক তরুণ

সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলছেন, একই সাথে পাহাড় ও সমুদ্র দেখার অভিজ্ঞতার জন্য কম খরচে ভারতের বিকল্প নেই। এমনকি বহু মানুষ এখন ভারতের দক্ষিণে ভ্রমণে যাচ্ছে সপরিবারে।

"এজন্য মূল কৃতিত্ব ভারত সরকারের। তারা বুঝতে পেরেছে ভিসা পাওয়া সহজ করে দিলে বাংলাদেশী পর্যটকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করা সম্ভব। এখন দিনাজপুরের কারও ভারতীয় ভিসার জন্য ঢাকায় আসতে হয়না। বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর চালু হওয়ায় ওই অঞ্চল দিয়ে ভারত হয়ে নেপাল ভুটানেও যাচ্ছে অসংখ্য পর্যটক"।

নতুন পাসপোর্টধারীদের প্রথম গন্তব্য প্রধানত ভারত

ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সি রহমান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এর কর্ণধার কাজী মোহাম্মদ জহির বলছেন দেশে নতুন কারো পাসপোর্ট হলেই তিনি চেষ্টা করেন পাসপোর্টে ভারতের ভিসা নিতে।

"তরুণদের অনেকেই মনে করে থাইল্যান্ড,মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে যেতে হলে আগে ভারতের ভিসা পাসপোর্টে থাকলে সুবিধা হবে। এমনকি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ হিসেবে ভারতেই যায়"।

জহির বলছেন তবে নিরেট ভ্রমণ করতে যারা যান তাদের চেয়ে কেনাকাটার জন্য যাওয়া লোকের সংখ্যা খুব একটা কম না।

"আগে শুধু কলকাতা নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটা করত মধ্যবিত্ত অনেকে। এখন মুম্বাই দিল্লী কিংবা চেন্নাই পর্যন্ত মার্কেটগুলোতে বাংলাদেশীদের ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে ঈদ বা পূজার আগে অসংখ্য মানুষ ভারতে যায় কেনাকাটার জন্য।"

তিনি বলেন, ঢাকার বহু ট্রাভেল এজেন্সি কোলকাতা,দিল্লী, মুম্বাই, কাশ্মীর, কুলু, মানালিতে প্যাকেজ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী পর্যটকরা।

সিলেটের হয্রত বিনয় ভদ্র প্রায়ই বেড়াতে কিংবা ট্রেকিংয়ে যান ভারতে। দল বেধে ঘুরে এসেছেন পাঞ্জাব, দিল্লী, উত্তরপ্রদেশ, লাদাখ, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মেঘালয়, সিকিম ছাড়াও বহু জায়গা।

তিনি বলেন, "বৈচিত্র্য যাকে বলে সেটি ভারতেই পাওয়া সম্ভব। মরুভূমি, বরফ, পাহাড়, সমুদ্র, পর্বত — সবই আছে সেখানে। আবার অনেকেই বই পুস্তকে যেসব ঐতিহাসিক স্থাপনার কথা পড়েছি তার প্রায় সবই ভারতে যেমন তাজমহল, কুতুবমিনার কিংবা ফতেহপুর সিক্রির মতো অনেক কিছুই বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জানা। সে কারণেই তারা এগুলো দেখতে খুব আগ্রহী থাকে"।

"আমরা মেঘালয়ের ঝর্ণা কিংবা গুহায় যেমন বাংলাদেশীদের দেখেছি তেমনি নাগাল্যান্ডের ধনেশ উৎসবে গিয়েও পেয়েছি বহু বাংলাদেশী পর্যটককে"।

তিনি বলেন সিলেটের কাছে ডাউকি দিয়ে শিলং যাওয়ার রুট এখন সবসময় সরগরম।

"৩/৪ দিন একসাথে ছুটি হলেই আপনাকে ডাউকি বর্ডারে দীর্ঘ ইমিগ্রেশন লাইনে পড়তে হবে। কাছে হওয়াতে পারিবারিক ছুটি কাটাতেও অনেকের জন্য ভারতে যাওয়াই সুবিধা"।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement